Nov 25, 2017

অসাধারণ ভালবাসার গল্প পর্ব ২ | love story


পর্ব ২
-কি খবর দুলাভাই? (ছোট শালী)
-খবর জানতে টিভিতে চোখ রাখো। (আমি)
-হা হা হা... সে খবর না আপনাদের খবর বলেন (বড় শালি)
-আমাদের খবর তোমাদের আপুর মুখ থেকে শুনতে পাবে বাড়িতে গিয়ে।
তবে খবর শুইনা আবার তোমরা ২ বোন আমারে মারতে আইসো না।
আমার কথা শুনে হাসছে শালীরা, সাথে বউও।
আমি চেয়ে দেখছি বউয়ের সেই অসাধারণ হাসি।
হাসিতে নেই কোন অভিমান, নেই কোন অভিযোগ।
যেন আমি ওকে হাসিখুশিতেই রেখেছি।
অথচ মেয়েটিকে স্বামীর অধিকারটাই দেইনি আমি।
এইদিকে মেয়েপক্ষের লোক এক এক করে সবাই ঘরে আসছে তাদের মেয়ে ও জামাইকে দেখতে।
আমিও ভদ্র মানুষের মতো চুপ করে দুই শালীর মাঝখানে বসে আছি।
আর মৌ সবাইকে চেয়ার টেনে বসতে দিচ্ছে।
ছোট শালীটা আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ছোট ছোট শব্দে আমাদের রাতের ব্যপারে জানতে চাইতেছে।
আর বড় শালিটা ওর মুখ বুঝে হাসছে আর ছোট বোনকে চিমটি কেটে বলতেছে চুপ করবি?
আমিও এতো মানুষের সামনে ওদের এমন কানাকানিতে লজ্জা পাচ্ছি।
হঠাৎ বাইরে থেকে শুনতে পেলাম খাবার টেবিলে বসতে বলছে সবাইকে।
সবাই চলে গেল খাওয়ার জন্য।
আমার শালী দুইটা হাত ধরে আমায় নিয়ে যেতে চাইলেও বল্লাম যাও তোমরা খাও।
ওরা তখন ওর আপুকে নিয়ে গেল।
আমিও উঠে গেলাম মেয়ে পক্ষকে খাওয়ানোর দিকে খেয়াল রাখতে।
এভাবে দিনশেষে রাত হয়ে এলো।
রেডি হয়ে ওদের নিয়ে আসা গাড়িতে উঠলাম।
আমি আর মৌ একসাথে বসেছি। দুই পাশে দুই শালী সারা রাস্তা আমায় হাসিয়ে মেরেছে।
এতো দুষ্টু আর মিষ্টি শালী পেয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না।
প্রায় ঘন্টাখানেক এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ কাঠের পুলের কাছে চলে এলাম।
একটুপরই তেলকুপি গ্রাম।
রাস্তার পাশেই আমার একমাত্র খালার বাড়ি।
এই খালাই আমার এই বিয়েটা ঠিক করেছে।
খালার পছন্দ আছে বলতেই হয়।
কারন মেয়েটা সত্যিই ভালো সবদিক থেকে।
যদিও আমি কখনোই মৌ কে বউ হিসেবে মেনে নিতে পারবো না।
গাড়িটা ব্রেক করলো আমার শ্বশুরবাড়ির সামনেই।
রাস্তার পাশেই বাড়ি। আমার খালার বাড়ির দুই বাড়ি পরই।
গাড়ি থেকে নামতেই দেখি ভিড়।
সবাই আমার দিকে চেয়ে আছে।
রাত দশটা পর্যন্ত খাওয়া দাওয়া এটা সেটায় কেটে গেল।
আমি আমার বউ মৌ রুমে শুয়ে আছি।
মৌ ও বাড়ির মহিলারা খেতে বসেছে।
একটু পড়েই ও আসবে।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়েছি ওমনি দরজা ঠেলে কেউ ঢুকে পড়লো।
তাকিয়ে দেখি দুই শালি।
ওরা আমার সাথেই খেয়ে নিয়েছে আমাকে জ্বালানোর জন্য।
ওদের দেখে সিগারেট টা আড়াল করেছি।
-আরে লুকাতে হবেনা খেয়ে নেন, সমস্যা নাই। (বড় শালী)
-দুলাভাই আমরা কিন্তু আজ রাতে আপনার কাছে থাকবো।
গল্প করবো সারারাত। (ছোট শালী)
-তাহলে তোমাদের আপু কোথায় থাকবে?
-আপু আমাদের রুমে থাকবে। এই বলে হাসছে দুই বোন।
সিগারেটটা দুটো টান দিয়ে ফেলে দিয়ে ওদের বসতে বললাম।
-আচ্ছা তোমাদের আপুটা কি ভালো নাকি খারাপ? (আমি)
আমার কথায় দুই বোন চুপ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে!
-কেন, কিছু হইছে ভাইয়া?! আপু কোন কষ্ট দিছে আপনাকে? (বড় শালী)
-আরে নাহ। জানতে চাইলাম ও কোন টাইপের?
আমার প্রশ্নটা ঠিকভাবে করা হয়নি।
-আসলে আমাদের আপুটা অনেক ভালো। আমাদের কোনদিন কখনো কষ্ট দেয়নি। নিজে না খেয়ে আমাদের দুই বোনকে খাইয়ে মানুষ করেছে ভাইয়া।
আমাদের কাছে আমাদের আপু অনেক ভালো।
জানেন ভাইয়া? ও না কখনোই কষ্ট পেতে দেয়না আমাদের।
একটু চাপা স্বভাবের।
তবে ওর বুকে অনেক মমতা, ভালোবাসা আছে।
এই বলে ছোট শালিটা চোখ মুছছে।
বড়টাও চোখ মুছছে আর বলছে ভাইয়া... ওকে আমরা খুবই মিস করবো।
আমাদের কোন ভাইয়া নেই। ঐ আপুই আমাদের সব।
এরমধ্যেই মৌ ঘরে ঢুকলো। ওরা চুপ হয়ে গেল।
বউ এসেই আমার সামনে এক গ্লাস দুধ দিলো।
খেয়ে নিলাম।
শালী দুইটা উঠে যাচ্ছে।
বললাম কি ব্যাপার যাও ক্যান? থাকবে না আমার সাথে?
-না ভাইয়া, অন্য সময় গল্প করবো আপনার সাথে।
এখন আমাদের এই মিষ্টি আপুটাকে নিয়ে গল্প করেন।
এই বলে হাসতে হাসতে বের হয়ে গেল শালীরা।
বউ দরজা লাগিয়ে খাটে এসে আমার পাশে শুয়ে পড়লো।
একটু নিরব থাকার পর মৌ আমায় বলল কি সমস্যা তোমার বলো এখন?
আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না। চুপ করে আছি।
হঠাৎ মৌ উঠে আমার পাশে একটা হাত রেখে আধশোয়া হয়ে আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল কি কাহিনী তোমার মাঝে?
আমায় বউ হিসেবে মেনে নিচ্ছো না ক্যান?
নাকি কাউকে ভালোবাসো? বাসলে বলো সমস্যা নাই।
আমি তোমায় এ বিষয়ে বন্ধুর মতো হেল্প করবো।
শুধু আমায় আপন মানুষ ভেবে সব খুলে বলো।
আমি মৌ এর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে বললাম...
-আমি একজনকে ভালোবাসি।
ওকে ছাড়া আমি কাউকে জীবনসাথী করার কল্পনাও করতে পারছি না।
আমার কথা শুনে মৌ সুন্দর মুখটা কালো হয়ে গেল।
-ঠিকাছে। সে কি তোমাকে এখন মেনে নিবে তার কাছে ফিরে গেলে।
-হা নেবে। কিন্তু তুমি? তোমার কি হবে?(আমি যে তোমার মায়ায়াও ভূলতে পারবোনা জীবনে)
-হা হা হা... আমার আবার কি হবে? কপালে যা আছে তাই হবে।
এখন তুমি ঘুমাও। তোমায় আমি হেল্প করবো এ বিষয়ে।
এই বলে গয়না শাড়ীটা খুলে ফেলছে মৌ (আজ নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে এমন একটা বউ কে জীবনে ভালোবাসতে পারলামনা বলে)।
আমি অনেক কষ্ট নিয়ে অপরদিকে মুখ করে শুইলাম।
একটুপর হাতটা আমার উপর তুলে দিলো মৌ।
-কিছু মনে করো না।
আমি ছোট বোনদের এভাবে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতাম। অভ্যাস হয়ে গেছে।


মাঝ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় কারো ফুপিয়ে কান্নার শব্দে!
তাকিয়ে দেখি বউ মৌ পাশে নেই আমার!!
লাফ দিয়ে উঠে দেখি মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ে মোনাজাতে বসে কাঁদছে মেয়েটা!
এই দৃশ্য দেখে অজানা কোন এক মায়ায় পড়ে গেলাম আমি।
ওর কান্না দেখে বুকের মধ্যে একটা কষ্ট নামক ঝড় বইছে আমার।
আমি কোন ভুল করছি না তো?
এই নিষ্পাপ মেয়েটার কি দোষ?
সে তো আমায় কখনো বলেনি আমায় বিয়ে করো।
সে তো জোর করে আমায় বিয়ে করেনি।
অন্য সবার মতো তারও তো স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার আশা ছিলো।
সেই আশাটাকে তছনছ করে দিচ্ছি না তো আমি?
এসব ভাবতে ভাবতে চোখের কোনে পানি জমে গেছে আমার।
আমি কি করবো এই মুহুর্তে? কোন পথ বেছে নেবো?
ওর মোনাজাত শেষ হওয়া লক্ষ করে চোখ দ্রুত মুছে স্বাভাবিক ভাবে শুয়ে পড়লাম।
ঘুমের ভান করে শুয়ে আছি।
তাড়াহুড়া করে শুতে গিয়ে অপরদিকে মুখ না করে বউয়ের দিকেই মুখ করে শুয়েছি।
মৌ একটুপর এসে খাটে উঠলো।
কিছুক্ষন যাবার পর অনুভব করলাম ও একটা হালকা চাদর আমার শরীরের উপর দিলো।
এরপর আমার কপালে একটা চুমো দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলো আমায়।
আমার নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।
বুকের ভিতর ধুক ধুক করছে অজানা কোনো এক শিহরনে।
ও বুঝতে পারেনি আমি জেগে আছি।
ঘুমের ভাব নিয়েই এই প্রথম মৌ"কে আমি বুকের সাথে নিজ থেকে জড়িয়ে নিলাম।
কিছুক্ষন ওভাবেই কাটালাম।
মেয়েটা ছটফট করছে আমার ছোয়া পেয়ে। আমি বুঝতে পারছি ও ওর স্বামীর আদর, ভালোবাসা পাবার জন্য ব্যাকুল।
কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না আমায়।
আমার ভিতরের পুরুষত্ব জেগে উঠছে।
পরক্ষনেই জুঁই এর কথা মনে পড়তেই আবার পাথর হয়ে গেছি।
চুপ করে অবুঝ বালকের মতো মৌ"এর বুকে শুয়ে আছি।
নিজেকে আজ অপরাধী মনে হচ্ছে।
কেন আমি জেনেশুনে বিয়ের পিরিতে বসলাম।
কেনই বা বিয়ে করেও দুইটা জীবন নিয়ে খেলছি।
মনে হচ্ছে বিয়ে করা বউটার উপর একটু বেশি অন্যায় করে ফেলছি আমি।
ভোরে ঘুম থেকে ডেকে তুললো ছোট শালি।
-এই দুলাভাই। রাতে কি গল্প করা বেশি হইছে আপুর সাথে?
উঠে হাত মুখ ধুয়ে নেন। খেতে হবে, খাবার রেডি।
আমি উঠে শালির সাথে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসলাম।
খাওয়া দাওয়া সেরে দুই শালীকে নিয়ে একটু ঘুরতে বের হলাম।
এই গ্রামটা আমার খুবই পরিচিত।
কারন ছোটকাল থেকেই এখানে আসা, যাওয়া আছে।
গ্রামটা দারুন। রাস্তার একপাশে ঘরবাড়ি অন্য পাশে একটা ছোট নদী বয়ে গেছে।
হাটতে বেশ ভালোই লাগছে।
হঠাৎ মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো আমার।
তাকিয়ে দেখি জুঁই কল করেছে।
আমি শালীদের চেয়ে একটু দুরে গিয়ে ফোনটা ধরলাম।
-হ্যালো, কেমন আছো জুঁই? (আমি)
-যেমনটা রেখেছো আমায়।
তুমি নিশ্বচয়ই নতুন বউকে নিয়ে খুব সুখে আছো? (জুঁই)
-আমিও ভালো নেই জুঁই। আমি বিয়েটা করেছি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে।
তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে চলে আসবো জুঁই।
-বাহ...! এসব নাটক বাদ দাও এখন।
যদি আমার কাছে আসতে তবে বিয়ে না করেই আসতে।
এখন তুমি অন্য কোন মেয়ের স্বামী।
তুমি অন্য কোন রক্তে মিশে গেছো।
-নাহ জুঁই। আমি বিয়ে করেছি ঠিকই। কিন্তু বউ বলে ওকে মেনে নেইনি।
এখনো আমাদের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়নি।
-ঠিকাছে, তাহলে তুমি আমার কাছে আসো। আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাও। যেখানে আমাদের কেউ বাধা হয়ে দাড়াবে না।
-হা আসবো। তুমি কয়টা দিন সময় দাও। আমার বিয়ে করা স্ত্রীও এ ব্যাপারে আমায় সাহায্য করবে।
-বিশ্বাস হয়না। কোন মেয়ে তার স্বামীকে হারাতে চাইবে না।
আর তুমি বলছো ও তোমায় এ ব্যাপারে সাহায্য করবে!!
-হ্যা সত্যি। ও খুবই ভালো মেয়ে।
-আচ্ছা তুমি পাকা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমায় ফোন করো।
আমি সব সামলে তোমার জন্য বাড়ি থেকে পালিয়ে আসবো।
-ওকে জুঁই রাখি। আমার শালীরা আছে সাথেই।
পরে কথা হবে।
-ওকে রাখো।
কল কেটে দিয়ে শালীদের কাছে এগিয়ে গেলাম।
দেখি বাদাম কিনে খাচ্ছে আর কয়েকটা মেয়ের সাথে কথা বলছে।
আমি এগিয়ে যেতেই বড় শালী আমায় দেখিয়ে ওই মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলল ইনিই আমার দুলাভাই।
মেয়েগুলো আমায় সালাম দিলো।
আমি উত্তর দিয়ে ওদের দিকে তাকালাম।
একটা মেয়ে আমায় দেখে চোখ কপালে তুলে, অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলল...
-আপনি ....... না (নামটা গোপন রাখলাম )
-হা, আপনি চেনেন আমায়?
-আরে ভাইয়া আমি ইরানি সুলতানা। আপনার গল্প নিয়মিত পড়ি আমি।
আপনার সাথে তো মাঝে মধ্যে কথা ও হয়।
-ও হা। আপনি সেই মেয়ে!
আসলে আপনাকে দেখা হয়নি তো আগে তাই চিনতে পারিনি।
-হুম, আপনি বিয়ে করেছেন তাইতো আর গল্প পাচ্ছিনা ফেসবুকে।
তো ভাইয়া আমাদের বাসায় আপনার দাওয়াত। চলুন আমাদের সাথে।
-ধন্যবাদ আপু। তবে আজ যেতে পারছি না। বিয়ে যেহেতু এই এলাকায় করলাম পরবর্তীতে এসে ঘুরতে যাবো আপনাদের বাসায়।
একটু পর আমাদের ওখান থেকে লোক আসবে।
এখন ফিরতে হবে আমাদের।
এই বলে ওনাদের বিদায় দিয়ে শ্বশুরবাড়ির দিকে রওনা দিলাম।
-দুলাভাই আপনি গল্প লেখেন তা তো বলেননি।

আমি তো গল্পখোর মেয়ে। (বড় শালী)
-এ বিষয়ে কথা উঠলে তো বলবো।
-আচ্ছা বাসায় গিয়ে আপনার সব গল্প পড়বো আমরা।
বিকেলে আমাদের পক্ষের লোক আসলো। খাওয়া দাওয়া হলো।
এইদিকে আমার ফোন নিয়ে গল্প পড়ায় ব্যস্ত আমার দুই শালী।
-এই যে আপুরা। এতো প্রেমের গল্প পড়লে আবার ভিতরে প্রেম চলে আসবে তোমাদের।
তখন আবার আমার ছোট ভাইদের সাথে লাইন মারতে চাইবে।
-উহ... একটা ভাই ও তো নাই আপনার।
যেই কাজিনগুলা আছে। একেকটা একেক রকম বান্দর স্টাইলে ঘুরে বেড়ায় সামনে।
ওসব স্টাইলওয়ালা ছেলেদের ভালো লাগেনা দুলাভাই।
আপনার মতো একটা সুইট শান্ত পোলা থাকলে না হয় দেখতাম।
এই বলে হি-হি হাসছে দুই বোন।
-আচ্ছা আমার মতো পোলাই খুঁজবো নে। এখন ফোনটা দাও। একটুপর বিদায় নিতে হবে।
-দুলাভাই আপনার গল্পের ভক্ত হয়ে গেলাম আমরা। দারুন লেখা।
আমরাও ফেসবুক আইডি খুলে আপনাকে বন্ধু করে নেবো নে।
-ওকে নিও। এখন যাও তোমাদের আপুকে তাড়াতাড়ি সাজিয়ে বের করে দাও।
রাত আটটার দিকে গাড়িতে উঠলাম।
শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী সহ বাড়ির সবাই মৌ কে আমার হাতে তুলে দিয়ে দোয়া করে দিলো।
আমার শ্বাশুড়ী বারবার কান্নাজড়িত কন্ঠে আমার হাত ধরে তার মেয়েটাকে আমার হাতে তুলে দিলো।
তার মেয়েটাকে যেন দেখে রাখি।
বুকে আগলে রাখি।
এইদিকে মৌ এর ছোট বোনদুটোও বোনকে ধরে কাঁদছে।
এতো মায়া, এতো ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমি কেমন যেন হয়ে যাচ্ছি।
শালী দুটো আমার হাত ধরে কেঁদে কেঁদে বলছে আমার আপুটাকে দেখে রেখো ভাইয়া।
মনের ভিতরটা কেমন জানি কেঁদে উঠছে আমার।
শালী দুটোকে আপন বোনের মতো বুকে জড়িয়ে বললাম তোমরা ভালো থেকো বোন।
তোমাদের বোনকে দেখে রাখবো আমি।

গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। মৌ এখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। ওর মাথাটা আমার ঘাড়ে রাখা। নানান চিন্তা আমার মাথায় ভর করছে! কি করবো আমি? একদিকে ভালোবাসার মানুষ, অপরদিকে এক সহজ সরল মেয়ে। আমি কি পারবো ভালোবাসার মানুষটাকে না করে দিতে? অথবা আমি কি পারবো এই নিরীহ মেয়েটাকে স্বামীহারা করতে? আমি পথহারা পথিকের মতো পথের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছি। এখান থেকে কোন এক রাস্তা বেছে নিতে হবে আমায় নিজেকেই। এক ঘন্টার ভিতর বাড়িতে পৌছে গেলাম। গাড়ি থেকে সবাই নামছে। মৌ এখনও আমার ঘাড়ে মাথা রেখে শুয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওর কথা বলার বা নেমে হেটে যাওয়ার শক্তি নাই দেহে। আস্তে করে ওকে ধরে নামিয়ে ঘরে নিয়ে এলাম। মেয়েটা ভেঙ্গে পড়েছে। হয়তো তার পরিবারকে ছেড়ে আসায় খারাপ লাগছে। আবার স্বামীকে আপন করে পাবেনা এটা ভেবে আরো মানষিক চিন্তায় আছে হয়তো। ওকে কোনভাবে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। দরজাটা আটকে খাটে বসে পড়লাম। একটা সিগারেট বের করে ধরালাম। মৌ যেভাবে শুইয়ে দিয়েছি ওভাবেই শুয়ে আছে। সিগারেট টানছি আর চেয়ে আছি ওর মায়াবী মুখটার দিকে। কি করে পারবো এই মেয়েটাকে স্বামীহারা করে জনম দুঃখী করে দিতে? সিগারেটটা শেষ করে ফেলে দিলাম। প্যান্ট খুলে লুঙ্গি পড়লাম। দারুন গরম পড়েছে আজ। ফ্যানটা ছেড়ে দিয়ে মৌ ভালোভাবে শুইয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ মনে পড়লো শাড়ী পড়ে ও তো ঘুমাতে পারে না। আস্তে করে ওকে টেনে তুলে বসালাম। আমার বুকে মাথা ঝুকে আছে মৌ। আমি নিজ হাতে ওর পরনের শাড়ি খুলে দিচ্ছি। এরপর গলা, কানের গয়না ও কোমরের বিছাটাও খুলে দিলাম। বুক থেকে আস্তে করে শুইয়ে দিলাম ওকে। মৌ আমার দিকে চেয়ে আছে। চোখ গড়িয়ে পানি পড়ছে ওর। আমি হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। এরপর অনেক্ষন চুপচাপ শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার শরীরের উপর ওর হাত পড়লো! জড়িয়ে ধরেছে আমায়। আমি ওর দিকে তাকালাম। ঘুমিয়ে গেছে ও। মুখটা কাছে নিয়ে আস্তে করে কপালে একটা চুমো দিলাম। বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম ওকে। এভাবে ঘুমিয়ে গেলাম। পরদিন ভোরে উঠেই বেরিয়ে পরলাম মাঠের দিকে। জুঁই কে কল দিলাম... কোথায় তুমি? (আমি) -বাড়িতে। (জুঁই) -একটু মাঠের দিকে আসো। -কেনো? -কথা আছে। -ওকে আসতেছি দাড়াও মাঠে। এই বলে ফোন কেটে দিলো জুঁই। জুঁইদের বাড়ি আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামেই। আর যে মাঠে দেখা করবো এটা দুই গ্রামের মাঝখানে। মাঠে গিয়ে বসে ভাবছি আগের দিনের কথা। কেন জানি আমার মা, বাবা জুঁইয়ের কথা শুনতে পারেনি। ওর কথা বারবার বলেছিলাম বাড়িতে কিন্তু বাবা বলেছে ঐ মেয়েরা ভালো না। কিন্তু আজ পর্যন্ত খারাপের কিছু দেখিনি জুঁইয়ের মাঝে আমি। আর এটাও জানি আমার মতো জুঁইও আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। কিন্তু বাবা, মার চোখে কেন খারাপ ও তা আজো বুঝিনি। জুংই দেখা যাচ্ছে কাদে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে কতোদিন পর ওকে দেখছি। ও এসেই আমার হাত ধরে টেনে বলছে চলো। -কোথায় যাবে? এখানেই বসো কথা বলি। (আমি) -মানে? কথা বলার সময় নাই। চলো বিয়ে করবো কোর্টে গিয়ে। -কি বলছো এসব! আমি তো তোমায় ডেকেছি একটু কথা বলার জন্য। এখন তো বিয়ে করার সময় না। -চুপ, আমায় যদি সত্যি ভালোবেসে থাকো তবে এখনি বিয়ে করতে হবে। নইলে চিরতরে হারাবে আমায়।আমি জুঁইয়ের কথায় কোনকিছু না ভেবেই ওর সাথে চলে গেলাম। কোর্টের কাছে যেতেই ২/৩ টা ছেলে আর মেয়ে আসলো ওর কাছে। বুঝলাম সাক্ষির জন্য ওদের আগেই ফোন করে আসতে বলেছে এখানে। কোর্টে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। বাইরে এসে জুঁই আমায় বলল... বিকেলে তুমি বাড়ি থেকে বের হবে। আমিও বের হয়ে মাঠে এসে থাকবো। ওখান থেকে আমায় নিয়ে দুরে কোথাও চলে যাবে। মনে থাকে যেনো... নইলে কিন্তু আমি তোমার বাড়িতে গিয়ে উঠবো। এই বলে বিদায় নিয়ে চলে গেল জুঁই। আমি অবাক চোখে চেয়ে আছি ওর দিকে! এসব কি হয়ে গেল এক মুহুর্তে! আমি খুব টেনশনে পড়ে গেলাম। হাটতে হাটতে বাড়িতে আসলাম। বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে পড়লাম। কি করবো এখন আমি? একদিকে নতুন বউ মৌ বাড়িতে। অন্য দিকে জুঁই কে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করলাম। কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেল সব। একটুপর মৌ বিছানায় এসে বসলো। আমার কপালে চিন্তার ভাজ দেখে মাথায় হাত রাখলো মৌ। -কি হয়েছে তোমার? মাথা ব্যথা করছে? এই বলে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে মৌ। আমি ওর দিকে চেয়ে আছি। ওকে যতো দেখি ততো বেশি মায়া"য় পড়ে যাই। -আচ্ছা মৌ' আমি যদি তোমায় তাড়িয়ে দিতে চাই বা খুব কষ্ট দেই তুমি চলে যাবে আমার কাছ থেকে। আমার এই কথা শুনে মৌ একটু চমকে যাওয়ার মতো দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে! -কোন মেয়ে স্বামীর বাড়ি আসলে সে যাওয়ার জন্য আসেনা। হাজার কষ্ট সয়েও সে স্বামীর ঘরে থাকতে চায়। তবে তুমি যদি আমাকে না রাখো তোমার সংসারে বাধ্য হয়ে আমায় চলে যেতে হবে। আর এতে আমার চেয়ে আমার পরিবারের লোক হয়তো বেশি কষ্ট পাবে। তবুও তোমার যদি এটাতে ভালো হয় আমি চলে যাবো। আর যদি কোনভাবে আমায় তোমার এই সংসারে ঠায় দেয়া যায় তবে আমি খুবই খুশি হবো। কিচ্ছু লাগবে না আমার। শুধু দু বেলা দু মুঠো ভাত আর একটু কাপড় দিলেই চলবে। আমি চাকরানীর মতো সব কাজ করবো। কোন অধিকার চাইবো না। এতে হয়তো আমার পরিবারের লোক কষ্ট পাবেনা। তারা জানবে তাদের মেয়ে সুখে আছে। আর এতেই আমার সুখ হবে। বাকিটা তোমার ইচ্ছা। যদি সম্ভব হয় আমায় কাজের মেয়ে হিসেবে একটু ঠাই দিও। তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করে নিয়ে আসো কিচ্ছু বলবো না। এই বলে মৌ আমার পা ধরে কাঁদছে। আমি ওকে টেনে বুকে জড়িয়ে নিলাম। -আমি তোমায় না জানিয়ে একটা ভুল করে ফেলেছি মৌ। আমি খুব টেনশেনে আছি। কি করবো বুঝতে পারছি না। -কি করেছো তুমি আমায় বলো। আমি তো আগেই বলেছি আমি বন্ধুর মতো তোমার উপকার করবো। তোমার কোন কাজে আমি বাঁধা দেবো না। শুধু আমায় একটু ঠাই দিও এটাই আমার চাওয়া। -আমি আজ জুঁইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু গিয়ে আমায় ওকে কোর্টে গিয়ে বিয়ে করতে হয়। এবং বিকেলে ওকে নিয়ে কোথাও চলে যেতে হবে এটাও বলে দিয়েছে। নইলে ওকে চিরতরে হারাতে হবে। আমি এখন কি করবো মৌ? এসব বলে মৌ এর দিকে তাকালাম। ওর মুখটা ছোট হয়ে গেছে। আমার দিকে তাকিয়ে কষ্ট চেপে বলতেছে... -ঠিক আছে তুমি যাবে। আমি এইদিকটা সামলে নেবো। মৌ মুখে এই কথা শুনে আমি অবাক হয়ে তাকালাম মেয়েটার দিকে! আল্লাহ্ কি দিয়ে বানাইছে ওরে?! এই মেয়েটাকে কোন কিছু না দিয়ে একবুক যন্ত্রনা উপহার দিচ্ছি আর ও তা হাসিমুখে মেনে নিচ্ছে। আমি পাগলের মতো ওকে বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমার মনে হচ্ছে আমি খুব বড় ভুল করছি। খুব বেশি অন্যায় করতেছি এই অসহায় মেয়েটির উপর। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলছে... গোসল করে আসো। আমি খাবার বাড়ছি। বিকেলে তুমি যাবে ওনার কাছে। এখন খেয়ে একটু নিশ্চিন্তে ঘুমাও.. বাকিটা আগামিতে পোস্ট হবে, গল্প পড়ে কেমন লাগলো কমেন্টে জানাবেন.....


EmoticonEmoticon