Oct 1, 2018

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ডায়েরীর শেষ পাতা




ক্লাসে ঢুকতেই মেজাজ বিগড়ে যায় ঐশীর।এই ছেলেটাকে সে একদম-ই সহ্য করতে পারেনা। কিন্তু রোজই সে আগে আগে ক্লাসে এসে বসে থাকে। উসকো খুসকো চুল, ময়লা জামা কাপড়, একদম অপরিপাটি এই ছেলেটির নাম রাফসান আহমেদ। ঐশী এখনো পর্যন্ত তার মুখ ভালো করে দেখতে পায়নি, আর পাবে কিনা তাও বলা মুশকিল। মুখের অর্ধেক চুল দিয়ে ঢাকা থাকে। শিক্ষকগণ সর্বদা বকতে থাকেন। কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হয়না। সবসময় ক্লাসে চুপ করে বসে থাকে, একটি প্রশ্ন পর্যন্ত করেনা কাউকে। মুখ ফুলিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে ঐশী। বড়লোকের মেয়ে হওয়ায় দেমাক একটু বেশি। তাছাড়া ভালো ছাত্রী সে। সকল শিক্ষকগণও তাকে খুব ভালোবাসেন। ক্লাসের সময় শুরু হয়ে যায়। ক্লাস টিচার মোঃ আরিফুজ্জামান ক্লাসে প্রবেশ করেন। বদমেজাজি শিক্ষক তিনি কিছুটা। কথার থেকে হাত বেশি চলে। রাফসান অনেক থাপ্পড় খেয়েছে তার হাতে। কিন্তু টু শব্দ পর্যন্ত করেনি কখনো। ক্লাসে পড়া জিজ্ঞাসা করলে কখনোই বলেনা সে, চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। সবাই জানে কলেজের সব থেকে বাজে ছাত্র এই রাফসান। এস.এস.সি রেজাল্টও তেমন ভালোনা। সবসময় বেশি কথা আর সবার রাগ সহ্য করে যায় সে।
-কাল তোমাদের টিউটোরিয়াল এক্সাম নেওয়া হবে। সবাই অংশগ্রহণ করবে বাধ্যতামূলক। কোনো প্রকার অজুহাত চলবেনা। (আরিফ স্যার বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের)
ক্লাস থেকে বেরোনোর সময় রাফসানের দিকে তাকিয়ে বলেন..
-পরীক্ষার কথা শুনে পালিয়ে গেলে হাড় গুড়ো করব। তোকে যেন সবার আগে দেখি।
অবশ্য সে সবার আগেই ক্লাসে হাজির থাকে।কিন্তু পরবর্তী দিনে একটু দেরি করে ক্লাসে প্রবেশ করে। স্যার ধমক দিয়ে বলেন..
-দেরী হলো কেন? প্রশ্ন ও উত্তরপত্র নিয়ে যা।
রাফসান চুপ করে প্রশ্ন আর উত্তরপত্র নিয়ে আসে। পরিক্ষার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নীরবে পরিক্ষা দেয় সে।
রেজাল্ট দেওয়ার দিন সবাইকে লক্ষ্য করে আরিফ স্যার বলেন..
-তোমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। কারোরই ফলাফল ভালো হয়নি দু'জন বাদে। তাদের উভয়েরই একই নম্বর। ঐশী এবং রাফসান।
রাফসানের কথা শুনে সকলেই অবাক হয়ে যায়। ফ্যালফ্যাল করে তাকায় সবাই তার দিকে।
-রাফসান এদিকে আয়।(কর্কশ স্বরে)
---ঠাসসসস(সজোরে একটা থাপ্পড় মেরে আরিফ স্যার বলেন)
-হতচ্ছাড়া, কার থেকে চুরি করে দেখে দেখে লিখেছিস। আমাদের কলেজের বদনাম করেই ছাড়বি তুই। (মুখের উপর খাতা ছুঁড়ে দিয়ে) যা বের হয়ে যা ক্লাস থেকে।
-(ঐশীকে ডেকে, মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে) দোয়া করি মা, অনেক বড় হও। আমাদের কলেজের মুখ উজ্জ্বল করো।
-কি হলো এখনো বের হসনি তুই। যা বেরিয়ে যা।
খাতা তুলে মুখে হাত দিয়ে বেরিয়ে যায় ক্লাস থেকে রাফসান। চোখ দিয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে থাকে। ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ায় খুব আঘাত পেয়েছে সে। ঐশী লক্ষ্য করে সে কাঁদছে। আজ প্রথম বারের মত রাফসানের জন্য তার মায়া হয়। কি দরকার ছিলো বেচারাকে মারার?
বছর ঘনিয়ে এসেছে। বার্ষিক পরিক্ষা দরজায় ধাক্কা মারছে। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে ঐশী। যেভাবেই হোক তাকে প্রথম হতেই হবে। পরিক্ষা চলে আসে খুব দ্রুত। খুব ভালো পরিক্ষা দেয় ঐশী।
ফলাফল ঘোষণার দিন..
সকল শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রী উপস্থিত রয়েছে। ঐশী খেয়াল করে রাফসান এক কোণায় মাথা নিচু করে বসে আছে। হয়ত পরিক্ষা ভালো হয়নি। তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে শিক্ষকদের বক্তৃতার দিকে মনোযোগ দেয় সে। কিছু সময় পর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। হার্টবিট ক্রমশ বেড়েই চলেছে। অবশেষে ফলাফল ঘোষণা করা শুরু হয়। প্রথমে গোল্ডেন এ+ প্রাপ্তদের নাম উল্লেখ করা হয়। নিজের নাম শুনে খুশিতে প্রায় লাফিয়ে ওঠে ঐশী। এর মধ্যে সে রাফসানের নামটাও শুনতে পায়। অবাক হয়ে তাকায় সে রাফসানের দিকে। রাফসান মাথাটা হাল্কা উঁচু করেছে। কিন্তু ঐশী তাকে দেখে ভাবলো রাফসান এ ফলাফলে খুশি নয়। শিক্ষকদের ভয়ে নাকি আরো ভালো ফলাফল শোনার আশায় এটা বুঝতে পারেনা ঐশী। পরিশেষে সমগ্র কলেজের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকারীর নাম ঘোষণা করা হচ্ছে। বুকের ভিতর হাতুড়ির আঘাত চলতে থাকে ঐশীর। কিন্তু পরক্ষণেই সে হতভম্ব হয়ে যায় যখন সে শুনত পায় নামটি রাফসানের। সকলেই অবাক দৃষ্টিতে তাকায় রাফসানের দিকে। ঐশী লক্ষ্য করে তার ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসির ছাপ। কিন্তু রাফসান? সব থেকে অমনোযোগী ভাবতো যাকে সে কিভাবে কলেজ টপার হলো? সকলের মনে একই চিন্তা। অনুষ্ঠান শেষ হবার পর অফিস কক্ষ থেকে ডাক পড়ে রাফসানের। সকল শিক্ষকদের মুখে একটাই কথা সে কিভাবে ১ম হলো?
-কার থেকে দেখে দেখে লিখেছিস? (প্রিন্সিপাল স্যারের প্রশ্ন)
--(রাফসান মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।)
-বল কার থেকে দেখে লিখেছিস?
--জ্বী স্যার, কারো থেকে না।
-তাহলে ১ম হলি কিভাবে? তুই তো এতো ভালো ছাত্র না।
--(নিশ্চুপ)
-কি হলো চুপ করে আছিস কেন?
রাফসান বোঝাতে চেষ্টা করছে সে কারো থেকে দেখে লেখেনি কিন্তু কেউই বিশ্বাস করছেনা তাকে। অনেক অপমান করে তাকে বের করে দেওয়া হলো।
পরবর্তী বছরেও একইভাবে প্রতিনিয়ত তাকে খুব বকা হয়। কখনো কখনো সে সহ্য করতে না পেরে কেঁদেই ফেলে।তার প্রতি কারোর একফোঁটাও সহানুভূতি জাগ্রত হয়না। বর্ষাকাল চলে এসেছে। বৃষ্টি নামলেই রাফসান খোলা মাঠের নিচে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে যতক্ষণ বৃষ্টি শেষ না হয়। একদিন ঐশী তার এই অদ্ভুত কান্ড দেখে খুবই অবাক হয়। মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, 'এই ছেলেটা এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিজছে কেন? ' প্রশ্নটি নিজেকে করলে উত্তর পাবেনা জেনে সে রাফসানকে প্রশ্ন করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু রাফসান কারো সাথে কথা বলেনা কারো ডাকে সাড়াও দেয়না। কে জানে তার মনের মধ্যে কোন কষ্ট গেঁথে আছে। হয়ত সবার অপমানগুলো বৃষ্টির প্রতি ফোঁটার সাথে ধুয়ে ফেলে সে। ঠান্ডা, জ্বর, সর্দির মধ্যেও সে ক্লাসে আসা বন্ধ করেনা। কি দরকার ছিলো অযথা নিজেকে অসুস্থ করার?
সময়ের কাঁটা অবিরামহীন ভাবে চলছে। এক মাস, দু'মাস, তিন মাস করে পার হতে হতে এইচ.এস.সি পরিক্ষা চলে আসে। ঐশী তাদের কলেজের গর্ব। সবার একটাই আশা, ঐশী। ঐশীও এটা মাথায় রাখে। খুব মন দিয়ে পড়াশোনা করতে থাকে সে। সময়ের কাঁটা চলতে চলতে পরিক্ষাও শেষ হয়ে রেজাল্ট দেওয়ার সময় চলে আসে। ঐশী খুবই উত্তেজিত হয়ে আছে রেজাল্ট পাওয়ার জন্য। পত্রিকায় সে তার রোল নম্বর মেলাতে থাকে। হ্যাঁ, পেয়েছে সে। তাদের শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে মেধা তালিকায় সপ্তম স্থান অধিকার করেছে সে। একটি বোর্ডের মধ্যে সপ্তম স্থান অর্জন করা খুব সহজ কথা নয়। তাই সে ভগবান কে অনেক ধন্যবাদ দিতে থাকে । হঠাৎ তার মাথার মধ্যে কি যেন ঘুরপাক খায়। কি মনে করে সে রাফসানের রেজাল্ট খুঁজতে থাকে। নাহ খুঁজে পাচ্ছেনা কোথাও। তাহল কি এতদিন সে সত্যিই অন্যের থেকে দেখে দেখে পরিক্ষা দিয়েছে? নিজেকে প্রশ্ন করে ঐশী। যাই হোক সে পত্রিকায় অন্য সংবাদ গুলো পড়তে থাকে। হঠাৎ তার চোখ আটকে যায় একটি নামের মধ্যে, রাফসান আহমেদ। সাথে ছবিও দেওয়া। সুন্দর মিষ্টি চেহারার একটা ছেলে। কেমন পরিচিত লাগছে তাকে ঐশীর কাছে। কলেজের নাম পড়ে সে দেখে এটা তাদেরই কলেজের নাম। তাহলে এটাই কি সেই রাফসান যাকে সে এই দুই বছর ধরে ঘৃণা করে আসছিলো? কিন্তু এই সে হলে তখন তার রোল নম্বর খুঁজে পেলোনা কেন? আবার আগের পৃষ্ঠায় ফিরে যায় ঐশী। হ্যাঁ হুবহু মিলে যাচ্ছে রোল নম্বর। তখন সে হয়ত ভাবেনি ও তাদের বোর্ডে ১ম হবে। এজন্য তখন খুঁজে পায়নি। সমস্ত কলেজে কলরব শুরু হয়। শিক্ষকগণ এতদিন ধরে তার উপর যে আচরণ করছে তা মনে করে খুবই লজ্জিত হন, কেননা আজ সকলের ভূল ভেঙেছে। কলেজ হোস্টেলে রাফসানের খোঁজ করা হয়। কিন্তু সে ততক্ষণে ছুটিতে গ্রামে তার বাড়িতে চলে গিয়েছে। ঐশীর জানার আগ্রহ বেড়েই চলেছে। রাফসানের গ্রামের নাম জেনে সেও সেইদিনই রওনা দেয় তাকে খুঁজে পেতে। গ্রামে চলতে চলতে অনেক কষ্টের পর সে রাফসানের বাড়ির ঠিকানা জানতে পারে। যত জনের কাছে রাফসানের নাম শুনেছে সকলের মুখেই রাফসানের প্রশংসা ব্যতীত কোনো দোষ শুনতে পায়নি সে। কিন্তু তাদের বাড়িতে গিয়ে অনেক অবাক হয় ঐশী। রাফসানের বাবা, মা এবং অন্য যারা ছিলো সকলেই ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসে আছে, আর ডুকরে ডুকরে কাঁদছে। তাদের কান্না দেখে ঐশীরও কান্না পায়। ঐশী তাদের পাশে গিয়ে বসে। নিজের পরিচয় দিয়ে সে জানতে চায় তারা কাঁদছে কেন। তার মা কোনো কথা-ই বলতে পারছেন না, শুধু আঁচল দিয়ে মুখ ঢেকে কেঁদেই চলেছেন। রাফসানের বাবা নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে থাকে...
-আর দশটা পাঁচটা ছেলের মত নয় আমাদের রাফসান। সবার থেকে আলাদা, ছোটবেলা থেকেই নম্র, ভদ্র এবং খুবই মেধাবী। কোনোদিন তার বিপক্ষে কেউ নালিশ নিয়ে আসেনি আমাদের কাছে।
(চোখ মুছতে মুছতে আবার বলতে থাকেন) কিন্তু ১০ম শ্রেণীতে উঠে সে কেমন বদলে যায়। তার মধ্যে অন্যরকম আচরণ লক্ষ্য করি আমরা। অধিকাংশ সময় বাইরে কাটাতো, মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকতো। বই নিয়ে বসতেই চাইতো না। কিন্তু সে বন্ধুদের সাথে বাজে আড্ডা দেওয়ার মত ছেলে নয়। আমি তার চলাফেরার প্রতি খুব কঠোর নজর দিতে শুরু করলাম। জানতে পারলাম সে তামান্নাকে ভালোবাসে। তার বাবা আমার অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধু। রাফসানকে আমি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করি কিন্তু সে কিছুই বলতোনা। আমি তামান্নার বাবাকে তামান্নার উপর নজর দিতে বলি। তিনিও নিশ্চিত হন বিষয়টা সম্পর্কে। তামান্না ভালো মেয়ে কিন্তু এই বয়সে এসব করা ঠিক নয় বিধায় আমি রাফসানকে অনেক বুঝিয়েছি, নিষেধ করেছি, খুব রাগও করেছি। কিন্তু সে আমাদের কোনো কথা ই শুনেনি। এস.এস.সি তে ফলাফল খারাপ করে বসে সে। আমি জীবনে প্রথমবারের মত খুব মেরেছিলাম তাকে। সে ব্যাথায় কাঁদতে শুরু করে। তার কান্না দেখে তার মা-ও কেঁদে ফেলে, কিন্ত আমার মনে এক ফোঁটাও দয়া হয়নি তার জন্য। তার পড়ালেখা বন্ধ করে দিতে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তামান্নার বাবা অনেক বুঝালেন আমাকে। অনেক কিছু বললেন। তারই পরামর্শ মত আমি রাফসানকে একদিন বলি-"যদি কোনোদিন এইচ.এস.সি তে স্টান্ড করতে পারিস, সেদিন আমাদের মুখ দেখাবি। আর নাহলে বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। তোর সমস্ত পড়ালেখা বন্ধ।" রাফসান সত্যি-ই বেরিয়ে যেতে লাগলো। আমি আবার তাকে বললাম-"যদি তামান্নাকে পেতে চাস তাহলে পড়াশোনা করতেই হবে তোকে। শ্রেষ্ঠ ফলাফল দেখাতে হবে সবাইকে।" রাফসান হঠাৎ থেমে যায়। সে বলেছিলো-"যদি স্টান্ড করতে পারি তামান্নাকে আমার হাতে তুলে দেবে তো?"
"হ্যাঁ দেবো, কথা দিচ্ছি"
এরপর সে পড়ালেখার জন্য শহরে একটা কলেজে ভর্তি হয়। এই দুই বছরের মধ্যে কোনো যোগাযোগ করেনি আমাদের সাথে। তার মা অনেকবার বলেছে তার খোঁজ নিতে কিন্তু আমার পাষাণ হৃদয় তার কোনো খোঁজই নেয় নি। আর অন্যদিকে তামান্না সারাক্ষণ মনমরা হয়ে পড়ে থাকতো। খেতোনা ঠিক মত। সবসময় ভাবতো যে রাফসান একদিন ঠিকই তার কাছে ফিরে আসবে।
এরপর একদিন রাফসান তো ফিরে এলো তার দেওয়া কথা পুর্ণ করে। কিন্তু...(জোরে কেঁদে দেন তিনি)
তার কান্না শুনে ঐশীও কেঁদে ফেলে। ঐশী আবার জানতে চায় "কিন্তু কি হয়েছিলো আংকেল?" রাফসানের বাবা চোখ মুছতে মুছতে আবার বলতে লাগলেন..
-তামান্না রাফসানের জন্য সবসময় পথ চেয়ে থাকত। নিজের যত্ন নিতেও ভুলে গিয়েছিলো। ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পড়ে সে। ক্যান্সার ধরা পড়ে তার। এতদিন হয়ত রাফসানকে শেষ দেখা দেখার জন্যই বেঁচে ছিলো। রাফসান অনেক খুশির সাথে আমাদের কাছে এসে তার রেজাল্ট বলে। তারপর জিজ্ঞাসা করে-"মা, তামান্না কেমন আছে?" তার মা আঁচলে মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করে। রাফসান বলে-"কি হয়েছে মা কাঁদছো কেন? বলো তামান্না কেমন আছে? বাবা কিছু বলছ না কেন?কেমন আছে আমার তামান্না?" আমাদের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে সে দৌড়ে তামান্নাদের বাড়িতে চলে যায়। গিয়ে দেখে তামান্না মৃত্যু শয্যায়। রাফসান দৌড়ে তার পাশে গিয়ে বসে।
-(কেঁদে কেঁদে) এই তামান্না কি হয়েছে তোমার? এভাবে শুয়ে আছো কেন? দেখ আমি চলে এসেছি। আমি আমার দেওয়া কথা পুর্ণ করেছি। এই তামান্না, দেখ আমি স্টান্ড করতে পেরেছি। কথা বলো তামান্না। আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। তামান্না কথা বলো। দেখ তোমার রাফসান ফিরে এসেছে। তামান্না, এই তামান্না?
তামান্নার চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। রাফসানের হাত ধরে শেষ বারের মত একটা মুচকি হাসি দিয়ে চিরকালের জন্য বিদায় নেয়।
-এই তামান্না, ঘুমিয়ে পড়লে? এখন কি ঘুমানোর সময়? গল্প করবেনা আমার সাথে? তামান্না ওঠো বলছি। দেখো আমি ফিরে এসেছি তোমার কাছে। তামান্না, উঠছোনা কেন? এই তামান্না? ও কথা বলবেনা তাইনা আমার সাথে? এতো অভিমান করেছো আমার উপর? তোমাকে ছেড়ে এতদিন কোথায় গিয়েছিলাম এজন্য? আর কোনোদিন কোথাও যাবোনা কান ধরছি। এবার চোখ খোলো। তামান্না, এই তামান্না?
তামান্না চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে না ফেরার পথে কে বুঝাবে এটা রাফসানকে? সে কিছুতেই তামান্নার কাছ থেকে উঠবে না। তাকে কোথাও নিতে দেবে না। তামান্নার লাশের পাশে বসে কেঁদে কেঁদে বারবার বেহুঁশ হচ্ছিলো সে।
--আংকেল রাফসান কোথায় এখন?
রাফসানের বাবা আর কিছু বলতে পারছেন না। কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন-"আমি মেরে ফেলেছি আমার রাফসান কে। আমি মেরে ফেলেছি একটা নিষ্পাপ প্রাণ। আমি মেরে ফেলেছি তামান্নাকে"
ঐশী শুধুই কাঁদতে থাকে। আবার জিজ্ঞাসা করে রাফসান কোথায়। তার বাবা শুধু আঙুল দিয়ে এক দিকে ইশারা করলেন। ঐশী দৌড়ে ছুটে গেলো সেদিকে। রাফসান একটা কবরের মাথার দিকে বসে আছে নির্বাক হয়ে। প্রতিদিন সে এভাবে তামান্নার কবরের পাশে বসে থাকে চুপ করে। মাস চলে যায় বছর চলে যায় রাফসান ঠিক এভাবেই বসে থাকে প্রতিদিন তার কবরের পাশে। বর্ষাকালে কবরের উপর ছাতা ধরে নিজে ভিজতে থাকে। কেননা তামান্না রাফসানকে বলেছিলো...
""বৃষ্টিতে ভিজলে তার ঠান্ডা লাগে। বৃষ্টিতে ভিজতে পারেনা সে।।""
সমাপ্ত**


EmoticonEmoticon