আমি মিতুর দিকে আরও একবার তাকালাম।মুখটা বেশ শুকনো শুকনো লাগছে।কিন্তু মেয়েটার মুখে হাসি ভাব রাখার বৃথা চেষ্টাটা আমার চোখ এড়ালো না।
আমি মিতুর দিকে একটু এগিয়ে গিয়ে হাতে থাকা তোয়ালেটা দিয়ে ওর ঘামে ভেজা মুখটা মুছে দিয়ে বললাম,
-যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
কথাটি বলে আমি ঘুরতেই মিতু আমার হাত ধরে আমার সামনে এসে বললো,
-তাকাও আমার দিকে, দেখো আমি ঠিক আছি।বাইরে একটু গরম তাই এমন দেখাচ্ছে।
মিতুর কথায় আমি কিছু বললাম না।ওর দিকে তাকিয়ে ওর গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললাম,
-এইতো,আর মাত্র মাস খানেক।এরপর আমার বউটাকে আর কষ্ট করতে হবে না।
আমার কথায় মিতু হাসি মাখা মুখে বললো,
-হ্যা সেটা দেখা যাবে।এখন চলো রান্না করতে হবে।
মিতুর কথায় আমি শুধু মাথা নাড়ালাম।মেয়েটা সব কষ্ট লুকিয়ে কিভাবে সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পারে এটা আমার জানা নেই।তবে ওর হাসিই বলে দেয় ওর কষ্টটার কথা।যেটা আমি দেখলেই বুঝতে পারি।
.
মিতুর সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে।এই টুকটাক কথা হতো আরকি।তবে এই কথা বলতে বলতে যে মেয়েটার প্রেমে পড়ে যাব এইটা বুঝতে পারিনি।কিন্তু এই প্রেমটাও ছিল এক দিক থেকে।
মিতু ছিল আমার দু বছরের বড়।ভালবাসা যে কোন বয়স দেখে না এইটা আজ বেশ ভালভাবেই মিলে গেলো।বলা হয় শিক্ষার কোন বয়স নেই।ঠিক তেমনি ভালবাসারও কোন বয়স নেই।
আমার প্রতি মিতুর কোন ফিলিংস না থাকলেও আমারটা ছিল ভরপুর ওর প্রতি।যেটা অনেক চেষ্টা করেও দমাতে পারিনি।মিতুর দিক থেকে শুধু একটাই অভিযোগ ছিল,আমি ওর ছোট।আর ছোটদের সাথে প্রেম বিয়ে হয় না।
আমিও যে ছেড়ে দেবার পাত্র নই।মিতুর পিছে লেগে থেকে ঠিকভাবেই পটিয়ে ফেললাম।আর আমাদের যে বাসা থেকে মেনে নেবে না এটাও আমরা বেশ ভালভাবেই জানতাম।তাই পালিয়ে বিয়ে করা।
.
চলো একটু বেলকুনিতে বসি।
.
খাওয়া শেষে উঠতেই মিতু কথাটি বললো।মেয়েটা সারাদিন অফিস করে এসে এখন কিভাবে বেলকুনিতে বসতে চাচ্ছে সেটা আমার মাথায় ঢুকছে না।অন্য কেও হলে এতক্ষনে ঘুমিয়ে পড়তো।আসলে আমাকে সময় দেওয়াটাই ওর মুখ্য বিষয়।
.
মিতু আমার বড় হওয়ায় ওর পড়াশোনাটাই আগে শেষ হয়েছিল।যার ফলে মেয়েটা আমাকে জব করতে না দিয়ে নিজেই জবে ঢুকে পড়লো।এদিকে আমার ফাইনাল এক্সাম ও প্রায় শেষের দিকে।এবার আর মিতুকে এত কষ্ট করতে হবে না।মেয়েটা যে আমাকে এতটা ভালবাসে সেটা আগে বুঝতেই পারিনি।
.
আজ অফিস যাবে না?
.
আমার কথায় মিতু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-না,তোমাকে নিয়ে শপিং এ যাবো।
-আমাকে নিয়ে।
-হ্যা,এখন তো বেশ কিছু ইন্টার্ভিউ দিতে হবে।এর জন্যে কিছু কেনাকাটার দরকার আছে।
-আরে না।লাগবে না আমার।আছেই তো সব।
-কি আছে সেটা আমি ভাল করেই জানি।কোন কথা বলবা না আর।
মিতুর কথায় আমি আর কিছু বললাম না।মেয়েটা যেটা বলবে ঠিক সেটাই করতে হবে।
.
বেশ কয়েকটা ইন্টার্ভিউ দিলাম।কিন্তু এই যুগে মামা,খালু ছাড়া যে চাকরি হবে না এটা বেশ ভালভাবেই জানা আছে।তাই চাকরি না খুজে মামা,খালু খোজাই বেটার হবে।
.
আজ মিতুর ঘামে ভেজা মুখটার জন্যেই আমার এগিয়ে যাওয়া।মেয়েটা সবকিছু এভাবে গুছিয়ে নেবে ঠিক ভাবতে পারিনি।
অফিস শেষে মিতু বাসায় আসতেই মেয়েটা আমার দিকে মলিন মুখে তাকিয়ে বললো,
-সরি আজ একটু দেড়ি হয়ে গেলো।তুমি একটু বসো আমি রান্না বসিয়ে দিচ্ছি।
কথাটি বলেই মিতু ঘুরতেই আমি ওর হাতটা ধরে আমার দিকে এনে টিস্যু দিয়ে ওর মুখের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললাম,
-আজ রান্না করতে হবে না,বাইরে খাবো।
-বাইরে, কি দরকার আছে।তুমি একটু বসো আমি এক্ষুনি রান্না করছি সবকিছু।
-না,বলেছি বাইরে খাব, বাইরেই।আর বিলটা আমিই দেবো।
আমার কথায় মিতু একটু অবাক হলেও সেটা প্রকাশ করলো না।আসলে সবকিছুর বিল তো ও নিজেই দিয়ে আসছে,আজ হঠাৎ আমি দেবো।
.
আমরা কোথায় যাচ্ছি?
.
মিতুর কথায় আমি কিছু বললাম না।এই নিয়ে প্রায় চারবার বললো কথাটা।রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিক্সায় চেপে বসতেই মিতু কথাটি বলেছিল।আমরা কোথায় যাচ্ছি।অবশ্য এই কথাটা মেয়েটা বলতো না, যদি না আমি বাসার উলটো দিকে রিক্সা নিয়ে না যেতাম।তবে আমার চুপ থাকা দেখে যে ওর কৌতুহল আরও বেড়ে যাচ্ছে এইটা বেশ ভালভাবেই বুঝলাম।
.
রিক্সা এসে থামলো একটা ছ তলা বিল্ডিং এর নিচে।আমি রিক্সা ভাড়াটা দিয়ে মিতুকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলাম।মিতুর মুখটা এখনও ঠিক আগের মতই আছে।আমি ওকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে তিন তলার একটা ফ্লাটের সামনে দাঁড়ালাম।আমি দড়জার দিকে এগিয়ে গিয়ে মিতুর হাতে একটা চাবি দিয়ে বললাম,
-এই নাও,খোলো।
আমার কথায় মিতু কিছু বলতে গিয়েও কেমন যেন বলতে পারলো না।তবে দড়জাটা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আমি মিতুর গালে হাত রেখে বললাম,
-এক রুমের বাসায় আর কতদিন,একটু তো চেঞ্জ দরকার।
আমার কথায় মিতু একটু আস্তেই বললো,
-তার মানে,
-তারমানে আমার চাকরি টা হয়ে গেছে।আর এই বাসাটা আমার তরফ থেকে তোমার জন্যে গিফট।
আমার কথায় মিতু কিছু বললো না।তবে আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চা মেয়েদের মত কেদে দিল।আমি মিতুকে একটু শক্ত করেই জড়িয়ে ধরে বললাম,
-এবার তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।চাকরিটা ছেড়ে দাও।
তোমার ঘামে ভেজা মুখটা দেখে আমার একটুও ভাললাগে না।তোমাকে আর চাকরি করতে দেবো না।কোন ভাবেই না,কোন মতেই না।
Oct 23, 2018
লাভ স্টোরি ভালোবাসার গল্প
✔
Admin
Diterbitkan October 23, 2018
Related Post
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
EmoticonEmoticon