Nov 7, 2018

স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ১



পর্ব এক.....
সবসময় ভাবতাম বিয়ে মানেই এক প্লেটে দুজনের খানা খাওয়া,গ্লাসের একই দিকে মুখ লাগিয়ে পানি পান করা,একই মিসওয়াক দিয়ে মিসওয়াক করা.......
ইত্যাদি ইত্যাদি!!
শুধু অামি না,হিদায়াহর পর অাশি শতাংশ বোনের চিন্তা-ই থাকে এমন।অামিও তাই এসব ভেবে পুলকিত হতাম,সাজদায় গিয়ে অাকুল হয়ে রব্বকে নিজের প্রয়োজন বলতাম,খুব শীঘ্রই বিয়ে হওয়ার জন্য দুঅা করতাম।চোখে কেবল একটা স্বপ্ন থাকতো,একটা ছোট্ট ঘর,বিছানায় একটা বালিশ,একটা প্লেট,একটা গ্লাস,কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র,কিছু তাফসীরের বই,দুইটা কুরঅান,একটা জায়নামাজ............
ব্যস এতটুকুই!এতটুকু দিয়েই ছোট্ট একটা জান্নাত সাজানোর স্বপ্ন দেখতাম অামি।
"বিয়ে" একটা ইবাদত হলেও,অামার চোখে তখন "রোমান্টিসিজম" একটা ইবাদত ছিল।
বিয়ে মানেই যে কেবলমাত্র রোমান্টিসিজম নয়,বরং অন্নেক.......
অঅঅন্নেক গভীর একটা ব্যাপার,তা বুঝলাম অামার জীবনে শায়খ অাসার পর।
হু!'শায়খ'
অামি উনাকে শায়খ বলে ডাকি।উনি অালেম নন,অালিয়ায়ও পড়েন নি তিনি,পড়েছেন জেনারেল লাইনে।সোশ্যাল মিডিয়ার কোনও পরিচিত মুখ নন তিনি।তার একেকটা পোষ্টে কয়েকশত লাইক,শতাধিক কমেন্ট,একগাদা শেয়ার হয়না।তারপরও তিনি এমন একজন মানুষ,যাকে না দেখলাম বুঝতাম ই না,প্রকৃত দ্বীনদার কেমন হয়।
পাঁচ ভাইয়ের মাঝে মেঝো জন অামার শায়খ।জাহেলিয়াতে অাচ্ছন্ন পরিবারের সকল বিদ্রুপকে উপেক্ষা করে তিনি অামাকে বিয়ে করেছেন মাসজিদে,মোহর ছিলো দশহাজার টাকা......
কি নাক সিঁটকাচ্ছেন?ভাবছেন মাত্র দশ হাজার টাকা কিসের মোহর!!
প্রতি মাসে নয়হাজার টাকা যার বেতন ছিলো,তার পক্ষে কয়েক লাখ টাকা দেনমোহর দিতে বিলম্ব হলেও,ধার্য করাটা নিশ্চয়ই অসম্ভব ছিলো না।অামার বাবা যখন পুরোই প্রশ্নবিদ্ধ মোহর নির্ধারণের এই অঙ্ক দেখে,অামার শায়খ একদম প্রশান্তির হাসি হেসে বলেছিলেন,"সাফিয়্যা মায়ের মোহর ছিল কেবলমাত্র তার মুক্তি,অার বাকি অাম্মাজানদের মোহর বারো উকিয়ার বেশী ছিলোনা।"
জানিনা বাবা কি বুঝেছিলেন,তবে এই নিয়ে অার উচ্চবাচ্য করেন নি।
শ্বশুর বাড়িতে এসে দেখলাম অামার হক্ব অাদায়ের জন্য তিনি অালাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছেন।শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ অামাকে ওয়েলকাম তো করেইনি,বরং বিদ্রুপের হাসি হেসেছিলেন।বড় জা তো টিপ্পনী কেটে বলেই ফেলেছিলেন,
'অারও কত কি দেখব।বোরকা,নিকাব,মোজা পরে কোন ভুতনি অাসছে কে জানে।'
অামার মন খারাপ হলেও শায়খের মুখে দেখেছিলাম একগাল হাসি।হেসে হেসেই উনি বলে উঠলেন,সূরা অাহযাব,অায়াত তেত্রিশ,অালহামদুলিল্লাহ,মাশাঅাল্লাহ.......
ওই মুহুর্তে লোকটাকে অামার পাগল ছাড়া কিছু মনে হয়নি.....
অাশ্চর্য হয়েছিলাম রাত্রীবেলা......
বিয়ে নিয়ে একগাদা স্বপ্ন দেখলেও রাতটুকু নিয়ে অদ্ভুত একটা চিন্তা ছিল।কিন্তু উনাকে দেখলাম বেশ হাসিমুখ নিয়েই রুমে অাসলেন,অামায় চড়া গলায় সালাম দিলেন,এবং অামার কোলে মাথা রেখে চোখ বুজলেন।অামি হতবুদ্ধি হয়ে তাকিয়ে ছিলাম,কি করা উচিৎ মাথায় অাসছিলো না।এরই মাঝে উনি গুণগুণ করে পড়া শুরু করেছেন,
"হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ.......
উ জুহুই ইয়াওমা ইযিন খশিয়াহ......
অামিলাতুন নছিবাহ.........
........................
............................
................................
সুম্মা ইন্না অালাইনা হিসাবাহুম!"
যতটা সময় উনি পড়ছিলেন অামি মন্ত্র মুগ্ধের মতন উনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম।বারবার মাথায় বাড়ি খাচ্ছিল,এটা সুন্নাহ না?রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম তো অাম্মাজানের কোলে মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াত করতেন.......
কি একটা প্রশান্তি!কি অদ্ভুত প্রশান্তি!অামি কেঁদে ফেলেছিলাম।উনি কোল থেকে মাথা না সরিয়েই অামায় জিজ্ঞাস করলেন ইশা পড়েছি কিনা।অামি না সূচক মাথা নাড়তেই উনি একলাফে উঠে পড়লেন,নির্দেশের স্বরে ইশা পড়তে বললেন।
অামিও ইশার স্বলাত অাদায় করলাম।সাজদায় গিয়ে অার মাথা তুলতে পারছিলাম না।কান্নায় ভেঙে পড়েছিলাম।কিসের কান্না বুঝিনি,শুধু কেঁদেই গেছিলাম।স্বলাত শেষ করে উঠেই দেখি তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন।অামিও অার না ডেকে ঘুমিয়ে পরি।রাতের খাওয়াটুকুও হয়নি সেদিন।মাঝরাতে ঘুম ভাঙলো চোখেমুখে হালকা মতন পানির ছিটা লাগায়।উঠে দেখি উনি বড় বড় চোখে তাকিয়ে অাছেন,ঘড়িতে সবে অাড়াইটা বাজে।ফজরের এখনও ঢের বাকি।উনি এত তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙালেন কেন!
উঠে বসতেই উনি যন্ত্রের মতন বলে চললেন....
"এত গাঢ় ঘুম কারও হয়?রাতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম ডেকে দেননি কেন? রাতে নিশ্চয় না খেয়ে ছিলেন?শরীরের একটা হক্ব অাছে না?নিশ্চয় খিদা লেগেছে।তাড়াতাড়ি উঠুন,হাতমুখ ধুয়ে অাসুন,অামি তরকারি গরম করেছি।ভাত বাড়ছি চলুন........"
উনি এমনভাবে কথা বলছিলেন যেন অামি উনার কত দিনের চেনা।কথায় একটুও জড়তা নেই।অামার একটু অস্বস্তি লাগলেও ভালই লাগছিল।ফ্রেশ হয়ে অাসতেই দেখি উনি খাবার সামনে নিয়ে বসে অাছেন।তবে এক প্লেটে না,অালাদা অালাদা প্লেটে,গ্লাস ও দেখছি দুইটা......
অামি পরিপূর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম,কোলে মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াত করা সুন্নাহ,এটা জানেন,অার একই পাত্রে,একই গ্লাসে খাওয়া যে সুন্নাহ,ওটা কি তিনি জানেন না?
চাপা একটা অভিমান জমা হলো মনে।অভিমান নিয়েই খেতে বসলাম................
চলবে ইনশাআল্লাহ!

2 comments

100 টরি বেশি স্বামী স্ত্রীর ভালবাসার এসএমএস দেখুন = https://banglacreativeblog.blogspot.com/2021/09/shami-strir-valobashar-sms-bangla.html


EmoticonEmoticon