Nov 7, 2018

স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ২



পর্ব দুই.....
খাওয়ার সময় লক্ষ করলাম তিনি সবকিছুই ঠিকঠাক রেখেছেন।অর্থাৎ দস্তরখানা বিছিয়েছেন,এক হাঁটু বিছিয়ে অারেক হাঁটু উঠিয়ে বসলেন,শব্দ করে বিসমিল্লাহও পড়লেন...........
সামনে থেকে অল্প অল্প করে খাচ্ছেন,খাওয়া শেষে হাতের অাঙুলগুলো যথাক্রমে মধ্যমা,শাহাদাত,বৃদ্ধা অাঙুল চেটে খাচ্ছেন।পানি খাওয়ার সময়ও দেখলাম একাগ্রতা!
বিসমিল্লাহ বলে ডান হাত দিয়ে গ্লাস ধরে তিন নিঃশ্বাসে পানি পান করলেন।
এমনকি খাওয়া শেষে দস্তরখানা অাগে উঠিয়ে,তারপর তিনি জায়গা থেকে উঠেছেন।
অামার অশান্তি লাগছিল.......
যে লোকটা এতকিছু মেইনটেন করেন,সে স্ত্রীর সাথে একই পাত্রে খেলেননা কেন?!মনে এক ধরণের ক্ষোভ সৃষ্টি হচ্ছিল।অাসলে কিছু পুরুষ থাকেই এমন,দেখা যায় হজ্জ করে এসেছে,অথচ স্ত্রীর সাথে ভালবাসা প্রকাশ করেন কম,হায়েজের সময় স্ত্রীকে অশুচি মনে করেন,এমনকি স্ত্রীকে সবসময় নিচু চোখে দেখেন!
উনিও বোধহয় তেমনই!গা জ্বলে যাচ্ছিলো রাগে।মন চাচ্ছিল অায়শা অাম্মাজানের মতন করে প্লেট টা ভেঙে ফেলি!!
খাওয়া বন্ধ করে রাগে ফুঁসছিলাম,উনি কোথায়,কি করছেন সেদিকে খেয়ালও ছিল না।একদৃষ্টে ভাতের দিকে তাকিয়ে অাছি,এমন সময় কানে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করলাম!কে যেন কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,
"অাউযুবিল্লাহ পড়ো,রাগ জাহান্নাম থেকে অাসে"
চমকে তাকিয়ে দেখি উনি,অামার শায়খ,একগাল হাসি নিয়ে অামার দিকে চেয়ে অাছেন।অামি অাবারও হতবাক,এই মূহুর্তে কি করা উচিৎ সেটাই খুঁজে পাচ্ছিনা।অন্য কেউ হলে হয়তো লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলতো।কিন্তু অামি অপলক চেয়ে ছিলাম।হাসিতে দাঁতের মাড়ি দেখা যাচ্ছে,লম্বাটে চেহারা,গালভর্তী দাঁড়ি,হাসির চোটে তার চোখগুলোও যেন হাসছে,নাকে একটা কালোমতন দাগ..... অাঘাত পেয়েছেন মনে হয় কখনও.........
কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম জানিনা,হুশ ফিরলো উনার চোখ মারা দেখে।
জ্বি হ্যাঁ!ঠিকই শুনেছেন,অামার চাহনী দেখে অামায় পরপর তিনবার চোখ মারলেন উনি!!
হুজুর মানুষ চোখ মারে.......
ভাবা যায়!!!
লজ্জায় চোখ নামিয়ে উনার মুখে মুখে অাউযুবিল্লাহ পড়লাম।ধীরে সুস্থে খাবার শেষ করলাম।ঘড়িতে দেখি তিনটা পনের বাজে।তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য অযু করে এলাম।এসে দেখি উনি বৈঠকে অাছেন।সম্ভবত তাশাহুদ পড়ছেন,অামি অাবারও খেয়াল করলাম তাকে।চোখেমুখে কি একটা প্রশান্তি,ঠোঁটে একপ্রকার হাসির অাভা লেগে অাছে।মনে হচ্ছে তিনি বুঝি তার খুব কাছের কারও সাথে খোশগল্পে মগ্ন!অামি অভিভূত হয়ে তাকিয়ে ছিলাম।উনাকে সালাম ফেরাতে দেখে অামি তড়িঘড়ি করে চোখ নামালাম।উনি অামায় নামায পড়তে বলে বিছানায় বসলেন।অামি স্বলাত শেষ করে দেখি এখনও চারটা বাজেনি।ফজরের ওয়াক্ত শুরু হবে পৌনে পাঁচটায়।ভাবলাম একটু কুরঅান পড়বো,কিন্তু এখানে কুরঅান কোথায় তা তো জানিনা.......
উনাকে জিজ্ঞাস করতেই উনি অামায় বিছানায় বসতে বললেন।অাবারও রাতের মতন অামার মাথায় কোল রেখে......
ইশ!না না!কি সব বলছি!
অামার কোলে মাথা রেখে বললেন,
"চলো মুখে মুখে পড়বে।বলো অাউযুবিল্লাহ......................
বিসমিল্লাহ................
হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ......."
অামিও পড়া শুরু করলাম,
'হাল অাতাকা হাদিসুল গশিয়াহ!
উ জুহুই ইয়াওমা ইযিন খশিয়াহ......
অামিলাতুন নছিবাহ.........
................
.....................
..........................."
উনার মুখে মুখে পড়ছিলাম।কখনও কখনও একটা অায়াতকে কয়েকভাগে পড়েছি,ধীরে ধীরে পুরো সূরা শেষ করলাম।অামি মন্ত্রমুগ্ধ!এই মানুষটাকে বুঝতে পারছিনা!কখনও ভাবিনি এভাবে কুরঅান পড়বো,কখনও এভাবে কুরঅান পড়ার স্বপ্ন দেখিনি।মানুষটার প্রতি শ্রদ্ধায় অামি একাকার হয়ে ছিলাম।না চাইতেই এত বড় একটা ঘটনার সাক্ষী করেছেন অাল্লাহ অামায়!কৃতজ্ঞতায় চোখে পানি চলে এলো!মনে মনে শুধু পড়ছিলাম,'অালহামদুলিল্লাহ!অালহামদুলিল্লাহ!অালহামদুলিল্লাহ অালা কুল্লি হাল......'
সূরাটা শেষ করেই তিনি বলা শুরু করলেন,
--বলোতো অামিনা,এটা কোন সূরা ছিলো?
--অাল গশিয়াহ।
--জানো এটা মাক্কি সূরা,গাশিয়াহ কিয়ামতেরই অারেকটা নাম,অামি রাতেও এটা পড়েছিলাম,মনে অাছে?অামার খুব প্রিয় সূরা এটা।তোমার ভাল লাগেনা সূরাটা?
--অামি তো অালাদাভাবে কখনও ভাবিনি এটা নিয়ে।তবে ভালই লাগে....!
--হ্যাঁ!হ্যাঁ!ভাল লাগবেনা কেন বলো?এটাও তো তোমার অামার রব্বেরই বাণী,তাইনা?পাশাপাশি সূরাটায় দেখো,প্রথম সাত অায়াতে কিয়ামতের কথা, জাহান্নামের কথা,জাহান্নামীর শাস্তির কথা বলা অাছে।তারপর অাট থেকে ষোল অায়াতে কেবলমাত্র তাদের কথা বলা হয়েছে,যা অামরা সবাই হতে চাই।বলোতো কাদের কথা?
--কাদের কথা?বলতে পারছিনা!অামি কখনও অর্থসহ পড়িনি সূরাটা!
--কেন পড়োনি অামিনা!অাল্লাহর প্রথম বাণীই তো হলো,ইকরা।পড়ো......
পড়ার তাগিদ স্বয়ং তোমার অামার রব্ব দিয়েছেন।তারপরও পড়োনি কেন?অাচ্ছা পড়োনি সমস্যা নেই।অামার সাথে পড়বে।এখন শুনো কি বলি.....
এই অামিনা!শুনছো?নাকি ঘুম অাসছে?
--না না!শুনছি,অাপনি বলুন।
--হ্যাঁ শুনো,পরের ষোল অায়াত অবধি অাল্লাহ জান্নাতিদের কথা বলেছেন।তারপর সরাসরি অস্বীকার কারীদের,অবিশ্বাস কারীদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,কি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন জানো?তিনি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,সৃষ্টি নিয়ে,এই উট,অাকাশ,পাহাড়,জমিন নিয়ে.....
প্রকৃতির ভারসাম্য নিয়ে।তারপর রসূলুল্লাহকে উপদেশ দেওয়ার অাদেশ করে অাবার মনে করিয়ে দিয়েছেন যে,অামাদের সবাইকে তার কাছে ফিরে যেতে হবে।অবিশ্বাসীদের কাছ থেকে তিনিই হিসাব নিবেন......
এই অামিনা,জানো এই অায়াতটা যখন পড়ি,
"ইন্না ইলাইনা ইয়াবাহুম" কেমন স্বস্তি লাগে!!একদিন অামরা অামাদের রব্বের কাছে যাব।তখন কি হবে বলো তো?খুব লোভ হয়,ওই অায়াতটা শুনতে।কোন অায়াতটা জানো,ওই যে......
--সালামুন ক্বওলাম্মির রব্বির রহীম,তাইনা?
--হ্যাঁ,হ্যাঁ,সূরা ইয়াসিনের অাটান্ন নং অায়াত টা......
দূর থেকে অাযান শোনা যাচ্ছে,তিনি অামার কোল থেকে মাথা উঠিয়ে ইস্তেঞ্জায় গেলেন,ওযু করে এসে দুই রাকাত নামায পড়লেন।তারপর অামার দিকে তাকিয়ে বললেন,
"চলো অাজকে অামি জামাঅাত করে নামায পড়াই।তুমি পিছনে দাঁড়াও অামার।এসো....... "
অামি একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছি।অার পাঁচটা বাসর রাত কেমন হয় অামি জানিনা।তবে অামার বাসর রাত অাল্লাহর রহমতে পরিপূর্ণ,একদম পরিপূর্ণ........
অাল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ভরে মাথা নোয়ালাম অামি।কে জানে,এত প্রশান্তিময় সাজদা হিদায়াহর পর অাগে কখনও দিতে পেরেছিলাম কিনা!
ইনশাআল্লাহ চলবে.............


EmoticonEmoticon