Nov 7, 2018

স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৩



পর্ব তিন......
ফজরের পর অামি মূর্তির মতন বসে ছিলাম।নতুন বউ হিসেবে ফজরের পর কি করা উচিৎ অামি বুঝতে পারছিলাম না।তারউপর রাত অাড়াইটা হতে জেগে অাছি।বালিশে একটু হেলান দিতেই ঘুমিয়ে গেলাম।ঘুম যখন ভাঙলো,তখন বড় জার বিদ্রুপ শুনতে পাচ্ছিলাম,ঘড়িতে প্রায় সাড়ে সাতটা বাজে......
অামায় উঠে বসতে দেখে বড় জার টিপ্পনী শুরু হলো......
--ও মা,এই ঘরে অাসেন।নবাবজাদির ঘুম ভাঙছে।হিহি....অামার বিয়ের পরদিন অামি কোন সকালে উঠছিলাম,অার এই মেয়ে!!
মা গো মা!!গোসলও করোনি এখনো!ছিহ!কি অশুচি!নাপাক একটা মেয়ে......
এতকিছু জানো,অার এটা জানোনা যে, গোসল কখন ফরজ হয়?কি লজ্জা!ও মা দেখে যান,অাপনার ছেলে মসজিদে গিয়ে কোন খবিশকে তুলে অানছে.........
অারও কতক্ষণ চলতো উনার টিপ্পনী কাটা কি জানি!অামি উনার কথার মাঝেই বলে উঠলাম....
--অাসসালামু অালাইকুম!কেমন অাছেন অাপা?
--কিসের অাপা?বড় বউ অামি এই সংসারের,ভাবি ডাকবে,বুঝছো?সালাম দিয়ে নিজেকে পীরনি ভাবো? এহহ!অাইছে বড় পীর!যাও গোসলে যাও।নাপাক কোথাকার।কেন যে এই নাপাকের ঘরে অাসছি,কে জানে!থুঃ!
কি অদ্ভুত মানসিকতা!যা তা বলে চলে গেলেন।উনি বের হয়ে যাওয়ার পরপরই শায়খ এলেন ঘরে।
--অাসসালামু অালাইকুম!ঘুম ভাঙলো?
ক্লান্ত ছিলে বলে ঘুমিয়ে পরেছিলে,তাই অার ডাকিনি।কিছু তো খাওনি না?ইশ!খাবে কিভাবে?এখনও তো হাতমুখও ধোও নি।যাও তুমি হাতমুখ ধুয়ে অাসো।
--ওয়া অালাইকুমুস সালাম!অাসলে....
অামি তো মিসওয়াকের জন্য কিছু অানি নি।
--ওহ।!অামার একদম মনে ছিলোনা,দাঁড়াও অামি এখনই ব্যবস্থা করি।
দুই মিনিটের মাথায় কোথা থেকে একটা ডাল এনে দিলেন তিনি।অামার অাবারও প্রচুর অভিমান হলো।নিজেরটা দিলে কি হতো যে অারেকটা এনে দিতে হলো?সুন্নাহ তো একই ডাল দিয়ে দুজনের মিসওয়াক করা।লোকটার মনে হয় শূচীবায়ু অাছে।সেসব নিয়ে না ভেবে ইস্তেঞ্জায় গেলাম।এসে দেখি ওমা!উনি প্লেট সাজিয়ে বসে অাছেন।এই লোকটা কি খাওয়া ছাড়া কিছু বুঝেন না?রাত অাড়াইটা বাজে খেলেন,এখন অাবার সকাল অাটটা বাজতে না বাজতেই....!
কি অদ্ভুত!অামাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজেই বলা শুরু করলেন,
--অাজ তো ওয়ালিমা অাছে।সারাদিন ঝামেলায় কাটবে।কখন খানা কপালে জুটবে কে জানে।তুমি বসো,কয়েকটা খেঁজুর খাও অাগে।এগুলা অাজওয়া খেঁজুর,দেশে পাইনি,সৌদি থেকে অানিয়েছি।জমজমের পানি ছিলো,শেষ হয়ে গেছে।নরমাল পানি দিয়েই খাও।শুনো ঘর ঝাড়ু দেওয়া হয়ে গেছে।রাতে খেয়েছিলাম যে,প্লেট বাটি ধোয়াও শেষ।এখন কাজ বলতে,বিছানাটা গুছানো বাকি,অার...........
অাচ্ছা,বাদ দাও।তুমি অাজ বিছানাটা গোছাও।কাল থেকে অামিও জয়েন করব ইনশাআল্লাহ!এসে তাড়াতাড়ি খাও।অামাকে অাবার ওদিকে যেতে হবে।ওয়ালিমার কাজে কোনও ত্রুটি যেন না থাকে,তা নিশ্চিত করতে হবে।শুনো,তুমি ঘর থেকে নড়িও না।অামি দেখছি মাকে বুঝিয়ে পাঠাচ্ছি তোমার কাছে।এখনও দাঁড়িয়ে কেন?বসো।
এবার খেয়াল করে দেখলাম,প্লেট একটা হলেও গ্লাস কিন্তু দুইটাই অাছে।খাওয়ার এক পর্যায়ে,উনি অাচমকা অামার থুতনিটা তুলে ধরে কিছু একটা খাইয়ে দিলেন।অামি একটু চিবিয়েই বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে অাছি,অার উনি খিলখিল করে হাসছেন।হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরেছেন!কি অদ্ভুত!উনি অামার মুখে খেঁজুরের পরিবর্তে সুপারির দানা গুঁজে দিয়েছেন।তাও এক্কেবারে কাঁচা!ইশ!কি বিদঘুটে স্বাদ!!
--বুঝলে অামিনা,মাঝে মাঝে অাহলিয়ার সাথে মজা করা লাগে।তাকিয়ে দেখছো কি?মুখ থেকে ফেলো ওটা।কস লাগছে না?ফেলো।বাকিটা খেয়ে শেষ করো,অামি যাই কেমন?
হনহন করে বেরিয়ে গেলেন এইটুকু বলে।উনি চলে যাওয়ামাত্র অামার হাসি পেলো।অামি শব্দ করে হেসে ফেললাম।যাহোক,উনি বলে গিয়েছিলেন মাকে পাঠাবেন।কিন্তু প্রায় ঘন্টা দুয়েক পার হওয়ার পরও মা অাসেন নি।অামার প্রচণ্ড একা লাগছিলো।কয়েকবার ভাবলাম,বের হয়ে দেখব।কিন্তু অচেনা জায়গা,তারউপর উনি বারণ করেছেন,তাই অার বের হইনি।বাবাকে ফোন করে কিছুক্ষণ কথা বললাম।তারপরও সময় কাটছিলো না দেখে ফেসবুকে লগিন করলাম,রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস বদলালাম,অাপুদের সাথে কিছুক্ষণ অাড্ডা দিলাম।তারমাঝেই বড় জা এসে পরেছেন।
--তোমার মত মেয়ে অামি জন্মে দেখিনি।কোথায় সকাল সকাল উঠে শ্বশুর শ্বাশুরির সেবা করবে,তা না।মোবাইল টিপছো।অবশ্য এটাই তো হওয়ার কথা।যেমন দেবা,তেমন দেবী।এখন শুনো কি বলি,এত দেরী করে ঘুম ভাঙলো কেন?রাতে কয়বার.....
হিহি!হাহাহা!ওমাগো!তবে হয়নি বলেই তো মনে হয়।অামার দেওর কি পুরুষ নাকি?নপুংসক বলেই মনে হয়।না হয় নাবিলা মেয়েটা ওকে ছেড়ে চলে যাবে কেন?নিশ্চয় কিছু গরমিল অাছে।নাহয় এত ভাল......
নাবিলা!!!!!!
চমকে উঠলাম অামি!!
উনি বকবক করেই যাচ্ছেন।অামার সেদিকে খেয়াল নেই। অামার শুধু রাতের কথা মাথায় ঘুরছে।সত্যিই তো উনি অামার কাছে অাসেন নি।তাছাড়া এই নাবিলা টাই বা কে?উনার প্রাক্তন?কই!অামায় তো বলেন নি।অস্থির লাগছিলো।চিনচিনে একটা ব্যাথা অনুভব করছিলাম,সেটা মাথার একপাশে নাকি বুকে কে জানে........
কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে প্রশ্ন করলাম,
--অাপা!নাবিলা কে?
--অাবার অাপা?মা বাবা কি এতটুকু শিখিয়ে পাঠায়নি যে,ঘরের বউকে ভাবি বলা লাগে?অবশ্য কি শেখাবেন অার?কোনও মতে চোরের মতন গছিয়ে দিয়েছেন মেয়েকে।অামার বিয়েতে সারে চার ভরি স্বর্ণ এসেছিল,অার তোমার?হাহ!নাবিলা তোমার বরের কোন জান্নাতি হুর,সেটা তোমার বর থেকেই জেনে নাও।যত্তসব!
রাগে গজগজ করে চলে গেলেন উনি।এদিকে অামার মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।নাবিলা কে?উনার প্রেমিকা?নাকি প্রথম স্ত্রী?
কই উনি তো বলেন নি উনি ডিভোর্সি কিনা!
তাহলে?
নাকি সত্যিই উনি নপুং......
না না!কি সব ভাবছি!কিন্তু উনি ই বা কাল অামার কাছে এলেন না কেন!!
ভাবছিলাম,অার তড়পাচ্ছিলাম!প্রচুর কষ্ট হচ্ছিলো...............
ওয়ালিমায় বাবা মা এসেছিল।ছোট বোনটার গায়ে নাকি কে মরিচের গুড়া গোলানো পানি মেরেছে,সেসব নিয়ে ব্যস্ত সবাই।অামার সেদিকে ভ্রুক্ষেপও নেই!
দুপুরে এলেন উনি।কিছু প্রয়োজন কিনা খোঁজখবর নিলেন।অাবার চলে গেলেন। সারাদিন অার দেখা নেই।ফিরলেন মাগরিবের পর।অামি কিন্তু ততক্ষণ না খেয়ে অাছি।অাসলে খিদার কষ্ট অনুভবই হচ্ছিলো না।মাথায় শুধু 'নাবিলা','নপুংসক' শব্দগুলো ঘুরছিলো।সারাদিন কোনওমতে চোখের পানি অাটকে রেখেছিলাম।যখনই উনি ঘরে এসে সালাম দিলেন,অার অাটকাতে পারিনি।ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম।খুব চেষ্টা করে শুধু এটুকু জিজ্ঞেস করলাম,
'নাবিলা এখন কোথায়?'
উনি অামার পাশে বসেই অামার কাঁধে হাত রেখে কান্নার কারণ জানতে চাচ্ছিলেন।প্রশ্ন শুনে এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালেন।তার চোখে রাগ নাকি ভয় বুঝতে পারছিলাম না।কিন্তু সেটা মূহুর্তের জন্যই।তারপরই ফিক করে হেসে দিলেন তিনি।জড়তাহীন কণ্ঠে জবাব দিলেন,
--নাবিলা বড়ভাবির বাবার বাড়িতে,হটাৎ এই প্রশ্ন কেন?তাছাড়া তুমি নাবিলার কথা জানলেই বা কি করে?জেনেছ বেশ ভাল!এটা নিয়ে কাঁদার কি অাছে শুনি?ভয় হচ্ছে?অামাকে হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছে?হাহাহা!
ভালবেসে ফেলেছ অামাকে?এক রাতেই?হোহোহো!সব বাদ দাও,খিদা লেগেছে?কিছু খাবে?অাচ্ছা,পরে খেও।জানো অাজ কি হয়েছে,অামার ছাত্র এসেছিল ওয়ালিমায়........
উনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে অন্য কথা বলছেন।এদিকে অামি তড়পাচ্ছি!উনি কি লুকাচ্ছেন অামার থেকে?উনাকে তো বেশ দ্বীনদার ই মনে হচ্ছিলো সকাল থেকে।তাহলে কি সবই নাটক?ভণ্ডামী!!
ইনশাআল্লাহ চলবে........

1 comments so far

This comment has been removed by the author.


EmoticonEmoticon