Nov 7, 2018

স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৪



পর্ব চার.........
উনি যত অামার কথা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন,অামার মনে সন্দেহ তত ভীড় করছিলো।এশার পর তিনি অাবারও অামার কোলে মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াত করেছেন.........
'ওয়াত্বুর....
ওয়া কিতাবিম মাস্তুর.....
ফি রক্কিম মানসুর......
....................
..................
ইন্না অাজাবা রব্বিকা লাওয়াক্বিউ.......
.......................
.......................
ইয়াওমা ইয়ুদা'উনা ইলা নারি জাহান্নামা দা'অা.........
.....................
.....................
ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম!'
অামি খেয়াল করলাম তিনি সূরাটা তিলাওয়াত করার সময় কিছুকিছু জায়গায় এসে কেঁদে ফেলছিলেন।অবাক লাগলেও অামলে নিই নি।অামি নিশ্চুপ মুর্তির মতন বসে ছিলাম।গতকাল কোলে মাথা রেখে কুরঅান তিলাওয়াতের এই ঘটনা অামায় যতটা অান্দোলিত করেছিল,অাজ তার সিঁকি ভাগও করছেনা।বোধ হয় অামার মূর্তরূপ দেখে তিনি বলা শুরু করেছেন,
--অামিনা!তোমায় হতাশ দেখাচ্ছে কেন?
--কই নাতো.....
--অবশ্য এই সূরাটা পড়লে হতাশ হওয়ারই কথা।ভয় করছে তোমার,তাইনা?
--না তো!কেন ভয় করবে?তাছাড়া এই সূরার বাংলা অর্থ কখনও পড়িনি,তাই.......
অাসলে অামি........
--ঠিকাছে সমস্যা নেই।পড়োনি তো এখন পড়বে।রোজ একটা সূরার কমপক্ষে বিশ অায়াত অর্থ অার তাফসীর সহ পড়বে কেমন?
--ইনশাআল্লাহ পড়বো।
--এখন শুনো,এই সূরাটা বুঝিয়ে দিই তোমাকে।এই সূরাতে প্রথমে তূর পাহাড়ের শপথ নেওয়া হয়েছে।তূর পাহাড় কোনটা জানো?মূসা অালাইহিস সালাম যেই পর্বতে দাঁড়িয়ে তোমার অামার রব্বের সাথে কথা বলতেন,সেই পাহাড়ের নাম।তারপর শুনো তারপর কিতাবের নামে,বায়তুল মামুরের নামে কসম করা হয়েছে।বলোতো বায়তুল মামুর কি?
--নিশ্চিত না,তবে একটা অার্টিকেলে পড়েছিলাম,বাইতুল মা‘মুর হলো সপ্ত আকাশের ওপর অবস্থিত সে ইবাদতখানা যেখানে ফেরেশতারা ইবাদত করেন। এ ইবাদতখানা ফেরেশতাগণের দ্বারা এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে থাকে যে, প্রত্যহ এতে সত্তর হাজার করে ফেরেশতা ইবাদতের জন্য প্রবেশ করেন। যাদের কিয়ামত পর্যন্ত পুনরায় প্রবেশের পালা আসবে না।
--মাশাঅাল্লাহ!সঠিক বলেছ।অাসলে সপ্তম আসমানে বসবাসকারী ফেরেশতাদের কা'বা হচ্ছে বায়তুল মামুর। এ কারণেই মেরাজের রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে পৌঁছে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-কে বায়তুল মামুরের প্রাচীরে হেলান দিয়ে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পান।কেননা দুনিয়ার কাবা তো তিনিই নির্মান করেছেন।
তারপর শুনো,তোমার অামার রব্ব কসম করেছেন অাকাশের অার সমুদ্রের নামেও।এখন তোমার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,অাল্লাহ যা বলবেন,তা তো সত্যিই বলবেন।তাহলে এতবার এতকিছু নিয়ে কসম কাটছেন কেন,তাইনা?
--হু,তা ঠিক।বারবার কসম কাটার কি প্রয়োজন ছিল?
--অামরা কেন কসম করি বলোতো?বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে,তাইনা?কেউ অামাদের কথা বিশ্বাস না করলেই অামরা শপথ করে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াই।কিন্তু তোমার অামার রব্বের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়।খেয়াল করলে দেখবে,তিনি তখনই কসম করেছেন,যখন খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলেছেন।পাশাপাশি কুরআন মাজীদে বিভিন্ন স্থানে যে বিভিন্ন কসম করা হয়েছে তার উদ্দেশ্য কথাকে সৌন্দর্যমন্ডীত, অলংকারপূর্ণ ও বলিষ্ঠ করে তোলা,বুঝলে?
--হ্যাঁ,বুঝলাম।
--দেখ এই সূরার মূল বিষয় কি!কিয়ামতের বর্ণনা,জাহান্নামের শাস্তি,জান্নাতের প্রাচূর্য্য,এবং অামাদের দায়িত্ব।বুঝলে না তো?
খেয়াল করলে দেখবে এর ছয় থেকে ষোল নং অায়াতে কেবলমাত্র কিয়ামতের ভয়াবহতা অার জাহান্নামীর শাস্তির কথা বলা অাছে।তারপর পরই দেখ, সতের থেকে অাটাশ নং অায়াত পর্যন্ত বলা অাছে জান্নাতের বিবরণ সম্পর্কে।
--জান্নাতের বিবরণ?!!কি কি বিবরণ!!
--এটাই যে,ওখানে থাকবে প্রাচুর্যতা।অার......
উঁহু বলবনা।এটা তুমি পড়ে নিবে।তারপর রব্বে কারীম অবিশ্বাসীদের প্রতি প্রশ্ন ছুঁড়েছেন,স্রস্টা সম্পর্কে,সৃষ্টি সম্পর্কে,তাদের কর্ম সম্পর্কে।অার তারপরই অাল্লাহ তাঅালা অামাদের কর্ম,অামাদের দায়িত্ব সম্পর্কে অালোকপাত করেছেন।কি কি দায়িত্ব জানো......?!
--না,অাপনি বলুন।
--"ওয়াছবির লিহুকমি রব্বিকা ফা ইন্নাকা বিঅা'ইউনিনা ওয়া সাব্বিহ বিহামদি রব্বিকা হিনা তাকুম"
এটা শেষ অায়াতের অাগের অায়াত।এটাতে বলা অাছে অামাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে,তারপরই বলা হয়েছে রব্বের তাসবীহ পাঠ করতে।
তারপরের অায়াত দেখ,ওটাতে বলা অাছে,
"ওয়া মিনাল্লাইলি ফাসাব্বিহ হু ওয়া ইদ বারন নুজুম"
এখানে অাদেশ অাছে রাতের বেলা,শেষ রাতে অার নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর রব্বের তাসবীহ পাঠ করার,রব্বের মহীমা ঘোষণা করার।যদিও এটা রসূলুল্লাহর প্রতি উপদেশ ছিলো,তথাপি এটা অামাদের জন্যও প্রযোজ্য।এই অামিনা,দরুদ পড়বে না?পড়ো সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম।রসূলুল্লাহর নাম নিলে দরূদ পড়া লাগে তো।গতকালও দেখলাম তুমি অামায় মনে করিয়ে দাওনি।
--অাফওয়ান!অামার মনে ছিল না।সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম।কিন্তু,মানে টা বুঝলাম না!এখানে কি তাহাজ্জুদের কথা বলা হয়েছে।
--শুধু তাহাজ্জুদ না,বরং মাগরীব,ইশা এদুটোও এই রাতের ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি কুরআন তিলাওয়াত, সাধারণ তাসবীহ পাঠ এবং আল্লাহর যিকরও বুঝানো হয়েছে।
--অার নক্ষত্র অস্ত যাওয়ার পর মানে?কোন সময়?কিসের ইবাদত?
--এটা সম্ভবত ফজরের স্বলাতের পূর্বের দুই রাকাত সুন্নত স্বলাতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
অামি মুগ্ধ হয়ে তার দিকে তাকিয়ে অাছি।এই লোকটা এত জানে কিভাবে?মাশাঅাল্লাহ!!মাশাঅাল্লাহ!!
কিছুক্ষণের জন্য অামার মনেই ছিলোনা,'নাবিলা' অার 'নপুংসক' শব্দ দুইটার কথা।মনে পড়লো,যখন তিনি অামাকে কাছে টেনে নিলেন।অামি প্রবল অস্বস্তিতে ভুগছিলাম।একদিকে 'নাবিলা' রহস্য জানার অাগে অামি তাকে এক্সেপ্ট করতে পারছিলাম না।অন্যদিকে তাকে বাধাও দিতে পারছিলাম না,কেননা তিনি অামার উপর অসন্তুষ্ট হয়ে রাত্রীযাপন করলে অামি গুনাহগার হব।তবুও অস্পষ্ট কণ্ঠে বললাম,
--অাই থিংক অাই নিড সাম টাইম....
--এন্ড সাম স্পেস অলসো,রাইট?
তার কথার ধরণ দেখে অামি অবাক হয়ে তাকিয়েছিলাম।কি অবলীলায়,জড়তাহীন কণ্ঠে কথাটা বলেছেন।যেন তিনি অাগে থেকেই জানতেন অামি এমন কিছু বলব।অার মুখে কি প্রশস্ত হাসি!!একদম পবিত্র একটা হাসি।নাহ!এই মানুষটা অার যাই হোক,অামাকে ঠকাতে পারেন না।কিংবা এমন কিছু করতে পারেন না,যা অামায় কষ্ট দিবে।অামার হক্ব নষ্ট করবে।অামি তবুও সাহস করে অাবার নাবিলার প্রসঙ্গ তুললাম।জানতে চাইলাম কে এই নাবিলা।তার খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর ছিলো,
--তুমি এখনও এসব নিয়ে পরে অাছ?অাচ্ছা পাগলী তো তুমি।অবশ্য এমন পাগলি ই অামার পছন্দ।এই অামিনা,এসো শুয়ে পরি।অার তোমায় একটা গল্প শোনাই।গীরাহ বোধের গল্প।
একবার কি হয়েছে শুনো,অাম্মাজান অায়শার ঘরে রসূলুল্লাহ অার তার সাহাবারা খেতে বসেছেন।এমন সময় উম্মে সালামাহ অাম্মাজান তার রান্না করা খাদ্যে পূর্ণ প্লেট পাঠালেন,তখন কি হয়েছে শুনো,অাম্মাজান অায়শা খুব ঈর্ষাকাতর হয়ে ওই প্লেটটাকে এক বাড়িতে ভেঙে ফেললেন।হাহা!কি বাচ্চামো তাইনা?এটাও কিন্তু এক প্রকার গীরাহ বোধ।অাচ্ছা তুমি জানো গীরাহ মানে কি?গীরাহ হলো একধরণের ঈর্ষা,প্রোটেক্টিভ জেলাসি..........
অামি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।তিনি অামার একহাত ধরে শুয়ে অাছে।অার অামি উনাকে মেনে নিতে পারছিনা।নাবিলা রহস্য না জানা অবধি অামার শান্তি মিলবেনা হয়তো।মানুষটা মাসনুন অামল করা শুরু করেছেন।অামায় মুখে মুখে অায়াতুল কুরসী,তিনকুল,সূরা বাকারার ২৮৫-২৮৬ অায়াত পড়াচ্ছেন।অামি পলকবিহীন চোখে তাকিয়ে অাছি তার দিকে।এই মানুষটাকে এত স্বচ্ছ, এত পবিত্র মনে হয়,তাহলে তিনি নাবিলা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন বারবার!!
ইনশাআল্লাহ চলবে.......


EmoticonEmoticon