পর্ব অাট.....
প্রথম প্রথম অামি একদমই অানাড়ি ভাব নিয়ে শাশুড়ি মায়ের কাছে রান্না শিখতাম।কত বকা যে খেয়েছি,রান্নায় অানাড়ি বলে,তা বলার বাইরে।প্রতিদিন নিয়ম করে রান্না করতাম মায়ের সাথে।মাঝেমাঝে হাত পুড়ে যেত,অামি মাছ কাটতে পারতাম না,প্রথম প্রথম কাটতে গেলে হাত কেটে যেত,অামার শাশুড়ি মায়ের একটা অভ্যাস হলো,তরকারির যেই অাইটেমই থাকুক না কেন,গোটা এলাচ ছাড়া রান্না করলে মা মুখে তুলতে পারতেন না,মায়ের মনমতন করে রান্না শিখছিলাম।বড় জা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকুরীরত ছিলেন,অামার শায়খ সকাল নয়টায় বের হতেন,ফিরতেন রাত নয়টায়।অার দেওররা সকাল দশটা-এগারোটার পর কেউ ঘরে থাকতো না বললেই চলে।পুরো বাড়িতে অামি অার মা!তাই অনিচ্ছাবশত হলেও মাকে অামার সাথে কথা বলতেই হতো।অামি প্রতিদিন বিকেল বেলা মায়ের চুলে তেল লাগিয়ে দিতাম,বেণী করে দিতাম।প্রথম প্রথম মা অবজ্ঞা করলেও,ধীরে ধীরে তিনিও অামার সাথে ফ্রি হচ্ছিলেন।একদিন লাজ লজ্জা একপাশে সরিয়ে মায়ের কাছে গিয়ে চোখ নিচু করে,লজ্জা লজ্জা ভাব এনে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
"মা!নাতী লাগবে?নাকি নাতনী?"
মা কিছুক্ষণ অামার দিকে চোখ লাল করে তাকিয়ে থেকে তেড়ে অাসলেন।অামার অাম্মাকে ফোন করে একগাদা বিচার দিলেন অামার নামে।পরে অবশ্য নিজেই হাসতে হাসতে বলেছিলেন,একটা নাতনী লাগবে উনার।না না!নাতনী না,বোন লাগবে উনার।জিজ্ঞেস করলেন,কবে দিতে পারব!
শুনে লজ্জায় অামার প্রাণ যায় যায় অবস্থা।কোনোমতে রুমে ফিরে শায়খের সাথে কপট রাগ দেখাচ্ছিলাম।অাসলে এই প্ল্যানটা উনারই ছিলো তো!
ধীরে ধীরে মায়ের সাথে অামার দূরত্ব কমে অাসছিল।তবে মায়ের মনে ক্ষোভ ছিল,অামাদের অালাদা ঘরের জন্য।একদিন ইশার পর অামি শায়খকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, অাসলেই কি অালাদা ঘরের প্রয়োজন ছিল?
অামার শায়খ হেসে উত্তর দিলেন,
--এটা তোমার হক তো অামিনা।জানোই তো হাদিসে অাছে দেওর ভাবির জন্য মৃত্যুর সমান।অার তোমার তো একটাও ননদ নেই,সবাই ই দেওর,গায়রে মাহরাম।এদের সাথে তো তোমার পরদা ফরজ, তাইনা?তোমার যাতে পর্দার সমস্যা না হয়,ফ্রিলি মুভমেন্ট করতে পারো,
তাই ই অামায় অালাদা ঘর করতে হয়েছে।
--কিন্তু এতে লাভ কি?অামায় তো দিনের সিংহভাগ সময় ই ওই ঘরে থাকতে হয়।যদিও পর্দা করি,কিন্তু অস্বস্তি লাগে খুব!
--অাশা করা যায় খুব বেশীদিন তোমায় এই কষ্ট সহ্য করতে হবেনা অামিনা!সবর করো......
--অাচ্ছা,অাপনাদের বাড়ির অাশেপাশে কোনও তালিম হয়না,মহিলাদের নিয়ে?
--উঁ,বলতে পারছিনা।অাগামীকাল খোঁজ নিয়ে জানাব ইনশাআল্লাহ!এখন অাসো তো,ঘুমানোর দুঅা পড়ি,জানো না,রসূলুল্লাহ সল্লাল্লহু অালাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও ইশার পর বেশী রাত জাগাকে পছন্দ করতেন না?
--তা তো জানি।কিন্তু অাপনি মনে হয়,কিছু একটা ভুলে যাচ্ছেন।
--ভুলে যাচ্ছি?!কি বলো তো!
--অাপনি কি ভুলে গেলেন,বুখারী শরীফে অাছে,ঘুমানোর অাগে উযু করা সুন্নত?!অথচ অাজ অাপনি উযু না করেই শুয়ে পড়েছেন!
--ইশ!একদম ভুলে গিয়েছিলাম।শুকরিয়া অামিনা,মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য,অামি এখনই অাসছি।
উযু করে এসে শায়খ দুই রাকাত নামায পড়লেন দেখলাম।অামি তো অবাক হয়ে গেছি!কি অদ্ভুত!!একটু অাগেই না তিনি মাসজিদ থেকে এলেন,অামার কোলে মাথা রেখে কুরঅানও পড়লেন।এখন অাবার কিসের নামায!
উনি সালাম ফিরিয়ে উঠতেই উনাকে বললাম,
--এটা কিসের নামায ছিল!?
--এটা?এটা তো তাহিয়্যাতুল উযু ছিল।উযুর পর দুইরাকাত নফল নামায পড়া।
--এটা কেন পড়লেন?মানে,এটার ফজিলত কি?
--এটা সুন্নাহ তো।রসূলুল্লাহ বলেছেন,'যে ব্যক্তি আমার অজুর মতো অজু করে এমভাবে দুই রাকাআত নামাজ পড়বে যে তার মনে কোন অন্য কোন ধারণা/কল্পনা জাগ্রত হবে না বা মনে মনে অন্য কোন কথা চিন্তা করবে না তাহলে তার পূর্বের সকল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে'।
--কই!এতদিন তো এই নামায সম্পর্কে বলেন নি অাপনি।মানে অাপনি জান্নাতে একা ই যেতে চান,তাইতো?বুঝলাম।
অামি অভিমানের সাথে এটুকু বলে ওপাশ ফিরে শুয়েছিলাম।তিনি অামায় টেনে তার কাছে অানলেন।
--এই যে অামিনা!শুনুন,অভিমান,অভিযোগ,রাগ,দুঃখ,কষ্ট সব স্বামীর বুকের মাঝে এসে করবেন,বুঝলেন?এতে ভালবাসা বাড়বে।
--লাগবেনা ভালবাসা,যে অামাকে জান্নাতে নিতে চায়না,তার জন্য কিসের ভালবাসা?ছাড়ুন অামাকে।
--না ছাড়লে কি করবে শুনি?সেদিনের মতন কুঁই কুঁই করে বলবে,"অাই নিড সাম টাইম...."
বলে হেসে উঠলেন তিনি।প্রায়সময় ই সেদিনের এই কথাটা বলে রাগান উনি অামাকে।অামি অাগে রাগলেও,এখন অার রেগে যাইনা।নিজের বোকামির কথা মনে পড়লে নিজের ই লজ্জা লাগে।
--অামিনা!একটা কথা বলবো,যদি কিছু মনে না করো.......
--ওমা!কি মনে করব অাবার?বলেন তো।
--না,অাসলে....
সেদিন দেখলাম গায়রে মাহরাম কয়েকজন তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে অাছে।পাশাপাশি তুমি উনাদের দাওয়াত দিচ্ছো।এটা তো ঠিক না অামিনা!
--কেন?ঠিক না কেন? অামি তো বেহুদা অালাপ করছিনা।দ্বীনের দাওয়াত ই দিচ্ছি,তাহলে সমস্যা কোথায়?
--ও অামিনা!তুমি জানো,সূরা অাহযাবের বত্রিশ নং অায়াতে তোমাকে অাদেশ করা হয়েছে,গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলায় কঠোরতা অবলম্বন করতে।এতে করে তার তোমার প্রতি অাকৃষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।অার এটা তো জানো ই,দ্বীনের দাওয়াতে কঠোরতা অবলম্বন করতে পারবে না।এর বিরুদ্ধে স্পষ্টত নিষেধাজ্ঞা অাছে।
--কিন্তু....
--দাঁড়াও বুঝিয়ে বলি।দাওয়াত দেওয়ার নিয়ম হচ্ছে,দায়ীকে অবশ্যই ই বিনয়ের সাথে,নম্রতার সাথে,কোমল ভাবে দাওয়াত দিতে হবে।দ্বীনের দাওয়াতের ক্ষেত্রে কোনওভাবেই কঠোরতা অবলম্বন করা যাবে না।পাশাপাশি নারীর উপর অাদেশ অাছে,পরপুরুষের সাথে কথা বললেই কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।তাহলে তুমিই বলো,একজন নারী একজন গায়রে মাহরামকে কিভাবে দ্বীনের দাওয়াত দিবে,যেখানে তার উপর অাদেশ অাছে কঠোরতা অবলম্বন করার,অার দাওয়াত দানের মূল শর্তই হলো কঠোরতা অবলম্বন না করা?এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাচ্ছে না?
--তা ঠিক,কিন্তু অামি তো সরাসরি বলছি না।
--জীবন যাপনের ক্ষেত্রে অনলাইনের বিধানগুলো সম্পূর্ণ অফলাইনের মতনই হবে গো অাহলিয়া।পাশাপাশি দেখ,এটা ই শেষ নয়,গায়রে মাহরামের সাথে কথা বলা তখনই জায়েজ,যখন সেখানে ওযর থাকবে,পাশাপাশি পরস্পর পরস্পরের উপর অাকৃষ্ট হওয়ার অাশংকা ও থাকবে না।কিন্তু তুমি একটা বিষয় ভাবো,তুমি যখন গায়রে মাহরাম কাউকে দাওয়াত দিবে,তখন সে কিন্তু অাপনাতেই তোমার প্রতি মুগ্ধ হবে।বারবার ভাববে,
"অাল্লাহ!এই মেয়েটা এত জানে!!"
ব্যস!বদনজর লেগে যাবে।
--বদনজর?!অাপনি বদনজরে বিশ্বাস করেন?
--করব না কেন?এটা নিয়ে কত হাদিস অাছে জানো?এই বদনজর একজন মানুষকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যে,কবর পর্যন্ত নিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
--বুঝলাম,তারপর?
--এই দেখো,দ্বীনের লেবাসে শায়ত্বান হাজির!!জানোই তো নারীর জন্য পুরুষ অার পুরুষের জন্য নারীর জন্য পুরুষের চেয়ে বড় ফিতনা অার কিছু নেই।পাশাপাশি দেখো,একজন নারী অার একজন পুরুষ নির্জনে থাকলে সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে শায়ত্বানের উপস্থিতি থাকে।অার জানোই তো,শায়ত্বান অাদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করার জন্য কত কু প্ররোচনা দেয়।এইজন্যই তো দেখো না,বাবা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ,ভাই কর্তৃক বোন ধর্ষণ,পরিবারের পুরুষ সদস্য,পাশের বাড়ির প্রতিবেশী কর্তৃক সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট এখন অহরহ হচ্ছে।
--কিন্তু অনলাইনে কি অামরা নির্জনে থাকছি নাকি?
--ইনবক্স!!ইনবক্স তো নির্জন স্থানই,তাইনা বলো?
--বুঝলাম এটা।কিন্তু একটা বাড়তি প্রশ্ন,সেদিন অামি একটা ফাতওয়া পড়েছিলাম,নারীর কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়,তাহলে.....?
--হু,যথার্থ পড়েছ। নারীর কণ্ঠস্বর পর্দার অন্তর্গত নয়।কিন্তু খেয়াল করো,প্রতিবারই কথা বলা তখন জায়েজ হবে,যখন কথা বলার একান্ত জরুরত হবে,পাশাপাশি অাকৃষ্ট হওয়ার অাশঙ্কাও থাকবে না।
--তাহলে অাপনিই বলুন,অাম্মাজান অায়শা কি হাজার হাজার সাহাবাকে হাদীস শিক্ষা দেন নি?কিভাবে দিয়েছেন?
--উনি দিতে পেরেছেন,কারণ পরিস্থিতি উনার অনুকূলে ছিল।রসূলুল্লাহর ওফাতের পর তার স্ত্রীদের অন্য পুরুষ কর্তৃক বিবাহ করা হারাম ছিলো।পাশাপাশি সাহাবাদের ঈমান এতই তেজদীপ্ত ছিলো যে,তারা দৃষ্টি অবনত রাখতেন,অাম্মাজানের প্রতি অাকৃষ্ট হওয়া তো দূর কি বাত,সর্বদা সকল প্রকার কলুষতা থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করতেন।কিন্তু তোমার পরিস্থিতি তো ভিন্ন,তাইনা বলো?
অামি চোখ বন্ধ করে মনের গভীর থেকে রব্বের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।অার অামার শায়খকে যাতে ইহকাল অার অাখিরাত,উভয় কালেই জাযাহ দেন,তা প্রার্থনা করলাম।চোখ খুলে দেখি অামার শায়খ ড্যাবডেবে চোখে তাকিয়ে অাছেন অামার দিকে।এবার অামি ঠিক উনার উল্টোটা করলাম,তাকে চোখ মারলাম!!
প্রথমবারের মতন।তারপরই মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে লগিন করলাম।এখন অামার কি করণীয়,অামি তা জানি।
ইনশাআল্লাহ চলবে.........
Nov 7, 2018
স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৮
✔
Admin
Diterbitkan November 07, 2018
Related Post
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comments so far
1000 স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার এসএমএস দেখুন
EmoticonEmoticon