পর্ব সাত.....
শাশুড়ির মন জেতার যথেষ্ট টিপস দেওয়ার পর শায়খ ঝাড়ু নিয়ে ঘর ঝাড়ু দিতে গেলেন।অামার তো চক্ষুচড়ক অবস্থা!!তিনি নাকি ঘর ঝাড়ু দিবেন!!এটা তো অামার কাজ!!!!অামি তার হাত থেকে ঝাড়ু নিতে গেলেই তিনি চওড়া হাসি দিয়ে বললেন,
"ঘরের কাজে অাহলিয়াকে সাহায্য করা সুন্নাহ তো।তুমি এক কাজ করো,দেখো তো তাকে ডিম থাকার কথা,ডিম অাছে কিনা।অার দেখো চালের গুড়া অাছে কিনা,কাঁচা মরিচও
অাছে মনে হয়।তুমি বরং এক কাজ করো,নাস্তা বানানোর মতন কি কি অাছে দেখ।অামি অাসছি"
অামি উনার কথামত সব খুঁজে বের করতে করতেই উনি চলে এসেছেন।অামার হাতে হাতে সাহায্য করলেন নাস্তা বানাতে।বানানোর পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন,
--অামিনা!অাম্মা ফজর পড়েই অাবার ঘুমান।উঠেন সাতটার পর,বাড়ির সবাই একই সময়ে উঠে।তুমি একটা কাজ করো,নিকাব পড়ে নাও,তারপর চলো নাস্তা নিয়ে অামরা ওই ঘরে যাই!
--অাচ্ছা,এই অালাদা ঘরের কি দরকার ছিল?
--ছিল বৈকি!এটা তোমার হক্ব তো।কয়েকদিন একটু কষ্ট হবে।তারপরই ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে।সবর করো অামিনা!
নাস্তা নিয়ে ওই ঘরে যখন গেলাম,তখনও শাশুড়ি মা উঠেন নি।তিনি অামায় নিয়ে টেবিলে খানা সজালেন।মাকে ডেকে তুললেন।মা অামার সামনে অাসা মাত্র অামি সালাম দিলাম।অার উনি উত্তর না দিয়েই বলে উঠলেন,
--তুমি এখানে কেন এসেছ?অামার সংসার ভেঙে শান্তি পাওনি?ঘর অালাদা করে শান্তি পাওনি?হাড়ি অালাদা করে শান্তি পাওনি?এখন এগুলো এনে ভালমানুষী দেখাচ্ছো?চেনা অাছে তোমার মত......
--ও অাম্মা!তুমি রাগ করে অাছ এখনও?
শাশুড়ি মায়ের কথার মাঝখানে বলে উঠলেন শায়খ.....
অামিনা,জানো!অাম্মার খুব পছন্দের খানা হলো নেহারি অার চালের গুড়ার রুটি।অামি অাজকে ফেরার সময় গরুর পায়া নিয়ে অাসব ইনশাআল্লাহ!ও মা!নাকি খাসীর পায়া অানতাম?
--কুত্তার পায়া চিনিস?ওইটা এনে তোর বউকে খাওয়া।অামার সামনে এসব নেকামি করবি না।ভাল সাজতে হবে না।
এটা বলেই মা উনার রুমের দিকে যাচ্ছিলেন।
অামার শায়খ উনার পা জড়িয়ে ধরে ফেললেন।
--ও মা!তুমি এখনও রাগ করে অাছ?তোমার ছেলের উপর রাগ করে অাছ গো মা?অামি নাহয় ভুল করেছি,এই মেয়েটা কি করেছে বলো?ও তো জানতো না,অামি অালাদা ঘর করছি ওর জন্য।অার ওকে দেখতে গিয়ে তো তুমিই বলেছিলে,ওকে দেখতে মায়া লাগে খুব।এখন ওকে এভাবে দূরে সরিয়ে দিচ্ছো কেন?ওর তো দোষ নেই।
--পা ছাড় অামার।ও ই দায়ী,অামার সংসারের ভাঙনের জন্য ও ই দায়ী।তখন বলেছিলাম ওকে দেখতে মায়া লাগে।এখন বলি শুন,এরকম কালো মেয়ে অামি অাগে কখনও দেখিনাই।গায়ের রংটা কেমন ময়লা।অামার ওকে পছন্দ না।দেখি পা ছাড়।এসব নাটক করিস না।
--ইন্নালিল্লাহ!মা!এসব কি বলো?তুমি তো এমন ভাবে কথা বলো না।অামার উপর রাগ বলে তুমি অাল্লাহর সৃষ্টিকে অবজ্ঞা করবে? ও মা! তুমি অামার উপর এখনও অসন্তুষ্ট? তাহলে দুঅা করো অামি যাতে অাজ রাস্তায় বের হলে এক্সিডেন্ট করে বসি।জানো তো,মায়ের দুঅা বিদ্যুৎ গতিতে অাল্লাহর কাছে পৌঁছে।দুঅা করো যাতে অামি মরি....
--চুপ কর বেয়াদব!তোর মরার জন্য তোকে জন্ম দিয়েছিলাম অামি?উঠ তুই,উঠ এখনই।
--অাগে বলো মাফ করে দিছ।
--তোকে মাফ করলেও ওই মেয়েকে মাফ করবোনা অামি।ওর জন্য অামার ছেলে অালাদা হয়ে.....
কান্নায় কথা অাটকে গেলো মায়ের।মা কাঁদছেন।অামার শায়খও কাঁদছেন।অামার শায়খ খুব অাহ্লাদ করে মায়ের হাতে খেতে চাচ্ছেন।মা কড়া ভাবে বলে দিয়েছেন, অামার তৈরি করা নাস্তা খাবেন না।তবুও অামার শায়খের অাবদারের কাছে হেরে গিয়ে উনাক খাইয়ে দিচ্ছেন মা।অামার শায়খ অামার হাত ধরে পাশে বসালেন মায়ের হাতে খাওয়ানোর জন্য।বিড়বিড় করে কিসব বলার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও অামাকে মা খাইয়ে দিয়েছেন।অামি হতভম্ব হয়ে বসে ছিলাম।কি করা উচিৎ বুঝছিলাম না।এমন সময় বড় জা এসে টিপ্পনী কাটছিলো.....
--ওমা!অাপনি এর হাতের রান্না খেলেন?গতকাল কত বেলা করে গিয়ে দেখি ও নাপাক মেয়ে,গোসল টুকুও করেনি।অাজ ও করেনি মনে হয়।এই অশূচী মেয়ের হাতের খাবার খেলেন অাপনি?
শায়খকে দেখলাম প্রশস্ত হাসি হেসে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলছেন,
--অার বলিও না মা,ওকে এসব তো শেখাতে হবে তাইনা?এটা তো অামিনার প্রথম বিয়ে, তাই কি করা উচিৎ বুঝেনা ও।অাজকে কি হয়েছে শুনবে?অাজকে ও.....
--এই ছেলে!তোর মাথা খারাপ?প্রথম বিয়ে মানে কি?মেয়েদের কি দশ বারোটা বিয়ে হয় নাকি?ও মেয়ে জানেনা,তো অামাকে জিজ্ঞাস করবে না?শেখার অাগ্রহ না থাকলে অামি কিভাবে শেখাব?অামি কি যেঁচে গিয়ে শেখাব নাকি?
অামার ঠেকা,হুহ!
--এই জন্যই তো কালকে তোমাকে ওই ঘরে যেতে বললাম।তুমি রাগ করে যাওনি।তুমি না শেখালে ও শিখবে কার থেকে বলো তো?তোমার চেয়ে ভাল শিক্ষিকা এই দুনিয়ায় অাছে নাকি অার?
অামি বুঝতে পারছিলাম,শায়খ এসব কথা মায়ের মন নরম করার জন্য বলছেন।তাই অামার অজান্তেই অামার মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল।অাচমকা শাশুড়ি মা অামার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
--রান্না বান্না কিছু পারো?নাকি সেটাও শেখাতে হবে?
--অল্প একটু পারি,অাসলে.....
--দেখি রান্নাঘরে যাও,ফ্রিজে ডিম অাছে।ভেজে অানো,যাও।
অামি অাবারও গাধার মত বসে অাছি।রান্নাঘর কোথায়,ফ্রিজ কোথায়,কিছুই তো জানিনা অামি।অামতা অামতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
--অামি তো রান্নাঘর চিনিনা....কোনদিক দিয়ে......
--হয়েছে অার বলা লাগবেনা।রূপা,যাও তো ওকে রান্নাঘরে নিয়ে যাও।রান্নাঘরে পৌঁছে দিয়েই চলে অাসবে।অার দেখি তো তোমার হাতে ফোন অাছে কিনা।এখন তো মেয়েরা ইউটিউব থেকে দেখে সব রান্না করে।দেখি হাত দেখাও.......
রূপা অামার বড় জায়ের নাম।ডিম ভাজার সময় অামি ইচ্ছে করেই নুন দিইনি,শায়খ বলেছিলেন এমন একটা ভাব করতে যাতে মনে হয় অামি একদমই অানাড়ি।এতে দুইটা লাভ,
এক.মা বুঝতে পারবেন,তাকে ছাড়া সংসার অচল।
দুই.মা রান্না শেখাবেন।এতে রান্না শেখার বাহানায় মায়ের কাছে বেশীক্ষণ থাকা যাবে।ফলে দূরত্ব ও কমে যাবে তাড়াতাড়ি।
অামি শায়খের ট্রিকস ফলো করে ডিম ভেজে মাকে দিলাম।মা একটুখানি মুখে দিয়েই বললেন,
--অাল্লাহ গো!এইটা কি ভেজেছে?নুন কোথায় নুন??ডিম ও ভাজতে জানোনা?
--ভুলে গিয়েছিলাম মা,অামি অাবার করে অানছি।
কাতর কণ্ঠে বললাম।
--থাক থাক লাগবে না।তোমার দৌড় অামার বোঝা শেষ!দেখলি বেটা,কাকে বিয়ে করে অানলি?ডিমও ভাজতে পারেনা।
--তুমি শিখিয়ে দিও তো মা।অাসলেই দেখছি অামিনা রান্নাটা পারে না।
--হ্যাঁ,হ্যাঁ!শিখাতে তো হবেই।ঠেকা অামার কিনা!না শেখালে অামার ছেলেকে ডেইলি না খেয়ে,নুন ছাড়া খানা খেয়ে থাকতে হবে।অাবার ঘরও অালাদা করেছে তারা।অামাকে ছাড়া ঘর চলবে?এই মেয়ে,তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।এখনই রান্নাঘরে ঢুকবে অামার সাথে।
মা কড়া নির্দেশ দিয়ে নিজের রুমে গেলেন।অামি শায়খের দিকে তাকানো মাত্রই তিনি অামায় চোখ মারলেন।মুখে সেই প্রশান্তির হাসি.............
চলবে ইনশাআল্লাহ............
Nov 7, 2018
স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৭
✔
Admin
Diterbitkan November 07, 2018
Related Post
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
EmoticonEmoticon