পর্ব ছয়.....
ফজরের পর তার মুখে মুখে অার রহমান পড়লাম।
--অার রহমান......
অাল্লামাল ক্বুরঅান....
খলাক্বল ইনসান.......
অাল্লামাহুল বায়ান........
...................................
...................................
...................................
রব্বুল মাশরি ক্বয়নি ওয়া রব্বু্ল মাগরিবাইন........
ফাবি অাইয়্যি অালা ই রব্বি কুমা তুকাজ্জিবান.......
...............................
...............................
ফা ইজান সাক্ক্বতিস সামাউ ফাকানাতান ওয়ার দাতান কাদ্দিহান.........
...............................
................................
হাজিহি জাহান্নামুল লাতি ইউকাযযিবু বিহাল মুজরিমুন.......
.............................
ওয়া লিমান খফা মাক্বমা রব্বিহি জান্নাতান...........
..............................
..............................
তাবারকাসমু রব্বিকা যিল যালালি ওয়াল ইকরম.........
...............................
..............................
--অামিনা!এই সূরাটা খুব সুন্দর না?মুখস্থ করতে কি খুব বেশী সময় লাগবে তোমার?
--না,কারণ এখানে একই অায়াত কয়েকবার অাছে।
--হ্যাঁ,পাশাপাশি অারও একটা কারণ অাছে।এই সূরাটার অর্থ এতই মনকাড়া যে তুমি একবার পড়লেই মনে থাকবে ইনশাআল্লাহ!অর্থটা তুমি পড়ে নিও,অামি হালকা ধারণা দিই কেমন?
দেখো এই সূরার প্রথম অায়তটা কিন্তু তোমার অামার রব্বের নাম দিয়ে শুরু হয়েছে,তাইনা?এই নামের মাহাত্ম্য বলে প্রকাশ করা যাবেনা।এই,তুমি রহমান অর্থ জানো?
--হ্যাঁ,পরম করুণাময়।
--কারেক্ট!এই সূরার মজা এটা ই.....
দেখো সূরার প্রথমে রব্বের একটা বিশেষণ এর কথা উল্লেখ অাছে,যে তিনি পরম করুণাময়।তারপরই তার করুণা সম্পর্কে উদাহরণ দিয়েছেন তিনি।
--যেমন?
--এইযে কুরঅানের সৃষ্টি,মাখলুকাতের সৃষ্টি,ভাষা শিক্ষা দেওয়া,প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা অর্থাৎ এইযে চাঁদ সূর্য নিজের কক্ষপথে বিরাজমান,মানুষ অার জিনকে সৃষ্টির উপমা,সমুদ্রের প্রবাহ,মনিমুক্তা সৃষ্টি,সমুদ্রের জাহাজ,দুনিয়ার সব কিছু.......
সবকিছু তো তিনিই সৃষ্টি করেছেন তাইনা?এসবই উল্লেখ করেছেন।
--তারপর?
--তারপর শুনোনা,তোমাকে অামাকে তিনি হিসাব নিকাশের রিমাইন্ডার দিয়েছেন।রিমাইন্ডার দিয়েছেন কিয়ামতের..........
জানো,সেদিন অপরাধীকে কিভাবে চেনা যাবে?
--কিভাবে?
--চিহ্নের সাহায্যে।এখানে অাবার জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা দেওয়া অাছে।যেমন জাহান্নামের ফুটন্ত পানি,জান্নাতের ঝর্ণাধারা,বাগান,ফলগাছ,হীরা,প্রবাল,ফলমুল,ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট হুর........
--হুর?!
--হু,ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা হুর!যাদেরকে এর অাগে কেউ কখনও স্পর্শ করেনি।অার তারা......
--অাপনি জান্নাতে গেলে অাপনাকেও কি হুর দেওয়া হবে?
--কেন শুনি?গীরাহ বোধ নাকি?
--অামি পড়েছিলাম,একজন জান্নাতি পুরুষকে বাহাত্তর টা করে হুর দেওয়া হবে।অাপনি জান্নাতে গেলে অাপনাকেও দেওয়া হবে,তাইনা?তখন কি অাপনি হুর নিবেন?
--বাহাত্তর টা হুর!!!এই কথা তোমাকে কে বলেছে শুনি!!
কুরআন বা কোন সহীহ হাদীসের কোথাও লেখা নেই যে প্রতিটি পুরুষ জান্নাতে বাহাত্তর টি হুর পাবে ৷বরং যেসকল পুরুষ প্রথম বেহেস্তে প্রবেশের যোগ্যতা অর্জন করবে, তাদের ব্যাপারে রাসূল সাঃ বলেছেন, যে দলটি সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেই দলের মানুষদের আকৃতি হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল। তারা সেখানে থুথু ফেলবে না, নাকের শিকনিও বের হবে না, প্রস্ৰাব-পায়খানাও করবে না। তাদের ব্যবহার্য পাত্রসমূহ হবে স্বর্ণের তৈরি আর সোনা-রুপার সংমিশ্রণে তৈরি হবে চিরুনি। চন্দন কাঠ ও আগরবাতি জ্বালানো থাকবে। তাদের শরীরের ঘাম হবে মিশকের মতো সুগন্ধময়। তাদের প্রত্যেকের জন্য দুজন করে স্ত্রী (হুর) থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশতের ভিতর দিয়ে তাদের পায়ের হাড়ের মজ্জা পর্যন্ত দৃষ্টিগোচর হবে। তাদের মধ্যে না থাকবে ঝগড়া-বিবাদ, আর না থাকবে হিংসা-বিদ্বেষ। তাদের সকলের অন্তর যেন একটি অন্তরে পরিণত হবে। সকাল-বিকাল তারা আল্লাহ তা'আলার পবিত্রতা বর্ণনা করবে।
--তাহলে যে অামি এতদিন পড়লাম.......!
--ভুল পড়েছ হয়ত।এটা সহীহ বুখারী,অার মুসলিম দুইটাতেই অাছে।
--অাচ্ছা,দুইটা দিলে দুইটা হুর কি নিবেন?
--অামার ঈমান,অামল খুবই দূর্বল অামিনা,অামি এসব নিয়ে ভাবিনা।
--শুনুন,হুর নিলে কিন্তু অামাকে পাবেন না।
--পাব না মানে?
হতবাক হয়ে বললেন উনি।
পাবনা কেন?জান্নাতে গেলে তুমিই তো অামার স্ত্রী হবে।
--তবুও,অামি সতীন মানতে পারবনা।
মন খারাপ করে বললাম......!
অামার কথার ঢংয়ে তিনি হো হো করে হেসে উঠলেন।
--ও অামিনা!তুমি জানো,জান্নাতি নারীর তূলনায় হুর কিছুই না।জান্নাতি নারীর সৌন্দর্য,সম্মান হুরের থেকে অনেক বেশী।
--হোক বেশী,লাগবেনা হুর।অামি সাবধান করে দিচ্ছি,অাপনি কিন্তু একটা হুরও নিবেন না।
--তুমি অামায় জান্নাতি সার্টিফিকেট দিয়ে ফেলছো অামিনা।
হতাশার স্বরে বললেন তিনি।
জানো অান নাজমে কি বলা হয়েছে,
'ফালা তুজাক্কু অানফুসাকুম,হুয়া অা'লামু বিমানিত তাক্ব....'
--অর্থাৎ?
--অর্থাৎ তোমরা নিজেদেরকে খুব পবিত্র মনে করো না। কে তাক্বওয়া অবলম্বন করে তা তিনি ভালভাবেই জানেন।
--অাস্তাগফিরুল্লাহ,বুঝলাম এখন।
--অামিনা!তুমি শুদ্ধভাবে কুরঅান পড়তে পারো?অাজ দেখলাম জিম,যাল,যা এ একই উচ্চারণ করলে,উচ্চারণ তো একই না।
--না,অাসলে.......
মানে.....
--বুঝেছি,বলতে হবেনা।মাত্র ছয়টা বাজে,এসো,খাতা কলম নিয়ে বসি।অাজ অামরা তাজউইদ নিয়ে পড়ব ইনশাআল্লাহ।
--এখন?!মানে....
এখন তো সকাল হয়ে গেছে।বাসায় কাজ করতে হবে না?
--হ্যাঁ,ভাল কথা মনে করেছ।শুনো অামিনা,তোমায় কিছু টিপ্স দিই।প্রথমেই নিয়ত করে ফেলো,যা কিছুই হোক না কেন,মায়ের মন জয় করবে ই।তারপর শুনো..............
তিনি একের পর এক উপায় বলে দিচ্ছেন,কিভাবে এগোতে হবে।অামি মুগ্ধতার সাথে মুচকি হাসছি।সব শায়খই যদি অাহলিয়াকে এভাবে সহযোগীতা করে,তাহলে জীবনটা কোথাও গিয়ে অাটকে থাকার কথা না।
চলবে ইনশাআল্লাহ.............
Nov 7, 2018
স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৬
✔
Admin
Diterbitkan November 07, 2018
Related Post
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
EmoticonEmoticon