Nov 7, 2018

স্বামী ও স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প পর্ব - ৯



পর্ব নয়.....
ফজরের পর উনি কুরঅান নিয়ে এসে বললেন,
--এই নাও।অাজ তুমি কুরঅান পড়ো তো,অামি দেখি, কোথাও ভূল হয় কিনা।
--অাপনার মুখে মুখে পড়লেই তো সঠিকভাবে পারব কুরঅান পড়তে।
--না অামিনা,পারবে না।
--কারণ?
--কারণ হচ্ছে,তাজউইদ!কুরঅান তাজউইদের সাথে তিলাওয়াত করা ফরজ।নাহয় অর্থের বিকৃতি ঘটতে পারে।যেমন ধরো,অামাদের কালিমা তাইয়্যিবার প্রথম অংশ কি বলোতো?"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" না?এবার এটার অর্থ বলো তো?
--হ্যাঁ....অর্থ হলো,অাল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই।
--এই দেখো,এই 'লা' বলার সময় একটা টান অাছে।দেখো তোমায় অারবীটা দেখাই,এটা কি?লাম অালিফ যবর লা.. না?কিন্তু তুমি যদি টান না দিয়ে পড়ো,তাহলে সেটা হবে 'লাম' যবর লা,তখন এই পূর্ণ কালিমার অর্থ বদলে যায়,তখন এই কালিমার অর্থ হবে,'আল্লাহ ছাড়া নিশ্চয়ই মাবুদ আছে'
নাউযুবিল্লাহ,দেখলে তো কিভাবে অর্থটা বদলে গেল?
অাবার দেখো,সূরা ইখলাসের প্রথম অায়াত,ক্বুল হু ওয়াল্ল হু অাহাদ।খেয়াল করো,শুরুতে যে হরফ অাছে,সেটা কিন্তু কাফ(ك) নয় ক্বফ (ق)।এই হরফটা উচ্চারণের সময় তোমায় একটু ধাক্কা দিয়ে উচ্চারণ করতে হবে।তখন এই ক্বুল শব্দটির অর্থ হবে বলো,অার পুরো বাক্য 'ক্বুল হু ওয়াল্লহু অাহাদ' এর অর্থ হবে,'বলো,তিনিই অাল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়'।
কিন্তু তুমি যদি ক্বুল শব্দটা উচ্চারণের সময় ক্বফের উপর জোর না দিয়ে স্বাভাবিকভাবে 'কুল' পড়ে যাও,তখন পুরো বাক্যটির অর্থ হবে,'খেয়ে ফেলো অাল্লাহ এক',অাস্তাগফিরুল্লাহ!
তারপর অাবার দেখো,একই রকম যেসব অক্ষর অাছে,যেমন ক্বফ(ق)-কাফ(ك),হা(ح),-হা(ه),অালিফ(ا)-অাইন(ع)-হামযা(ء),ছা(ث)-সোয়াদ(ص)-সিন(س),তা(ت)-ত্বোয়া(ط),জিম(ج)-যাল(ذ)-যোয়া(ظ),লাম(ل)-লামঅালিফ(لا)......
এই শব্দের উচ্চারণ গুলো কিছুটা কাছাকাছি বলে অামরা একই উচ্চারণ দিয়ে সমজাতীয় সবগুলো হরফকে উচ্চারণ করি।বাস্তবিকভাবে তোমার মনে হবে,এটা তো নরমাল ই।কিন্তু অাসলে তা না!এটার জন্য
অর্থের কত মারাত্মক বিকৃতি হয়ে যায়!
--বুঝলাম শায়খ,বুঝলাম.....
এখন অাপনি বলুন তো,অাপনি মাশাঅাল্লাহ এত কিছু কিভাবে জানেন?হিফয করেছিলেন?
--নাহ,হিফয করার সৌভাগ্য অামার হয়নি।অার কেবলমাত্র হিফয করলেই সহীহভাবে পড়তে পারব,নাহয় পারব না,এটা কে বললো অামিনা?তাজউইদ শেখা তো ফারজে অাইন।সেটা শেখা তো প্রত্যেকটা মুসলমানের উপর ফরজ।
--ফারজে অাইন?সেটা অাবার কি?
--সেটাও এক প্রকার ফরজ অারকি।
--মানে?ঠিক বুঝলাম না।
--ফরজ মানে কি বলো তো?ফরজ মানে হলো যেটা করতেই হবে,অর্থাৎ অবশ্য পালনীয় কাজ,বুঝেছ?
--হু,তা তো জানি ই।
--অার এই ফরজ দুই প্রকার,
১.ফারজে অাইন।
২.ফারজে কেফায়া।
এখন অাসি ফারজে অাইন নিয়ে কেমন?
প্রাপ্ত বয়স্ক সবার উপর যাই বাধ্যতামূলক তাই ফরজে অাইন। যেমন,পাঁচওয়াক্ত নামাজ ও রমজানের রোজা,সামর্থ্য হলে হজ্ব,যাকাত,পর্দা,তাজউইদসহ কুরঅান তিলাওয়াত,ইত্যাদি।
অার ফারজে কেফায়া হলো,যা মুসলমানের জন্য ফরজ কিন্তু সবার পক্ষ থেকে একজন পালন করলে সবার অাদায় হবে তা।
যেমন, জানাযার নামাজ,হিজরী তারিখের হিসাব রাখা,পরশুদ্ধি ইত্যাদি.....
বুঝলে?ক্লিয়ার হলো?
--হু,বুঝলাম।অাচ্ছা,এখন তো সকাল হয়ে গেছে।অামরা কালকে থেকে পড়বো কেমন?
--না,এখন থেকেই পড়বো।জানো সূরা মুযযম্মিলের চার নং অায়াতে অাল্লাহ অামাদের স্পষ্টভাবে কুরঅান তিলাওয়াতের অাদেশ দিয়েছেন।অার জানো হাদিসে অাছে,"তোমরা তোমাদের ধ্বনির সাহায্যে কুরআনকে সুষমামন্ডিত কর, অথবা তোমরা কুরআনকে তাজউইদ ও তারতীলের সাথে সুন্দরভাবে পাঠ কর।"
সম্ভবত এটা অাবু দাউদের ১৪৬৮ নং হাদিস।এখন দেখি এদিকে এসো।খাতাটা দাও।অামি লিখছি তাজউইদ কি.........
ইনশাআল্লাহ চলবে....


EmoticonEmoticon